পরীক্ষা আমাদের জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আগ পর্যন্ত পরীক্ষাগুলোকে মোটামুটি সিরিয়াস পরীক্ষা হিসেবেই অভিহিত করতে পারি। এসময় ছাত্রছাত্রীরা যেমন সিরিয়াস হয়ে যায়, তেমনি বাবা-মা ও। প্রতিদিন যেখানে পড়ার টেবিলে মোটা মোটা দুটো টোস্ট বিস্কিট আর এক গ্লাস পানি দিয়ে যাওয়া হয়, আজ সেখানে মা দিয়ে যায় এক গ্লাস দুধ তাও আবার হরলিক্স মিশিয়ে। রাতে মাংসের সবচেয়ে বড় টুকরাটি পরীক্ষার্থীর ভাগে। ডিম রান্না তো দূরে থাক একমাস আগে থেকে ডিম কেনাই বন্ধ করে দেয়া হয়। আর একটু পরপর এসে মা-বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে যাবে।
-মাথা একটু ঠান্ডা রাখিস কেমন?
-আপনি যেভাবে মাথা ঘষছেন তাতেই তো মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে!
পরীক্ষার সময় একজন পরীক্ষার্থীর সাত খুন মাফ। সে যতবড় অন্যায়ই করুক, তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই, বরং তাকে তেল মালিশ করা হয়।
-আপনি যেভাবে মাথা ঘষছেন তাতেই তো মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে!
পরীক্ষার সময় একজন পরীক্ষার্থীর সাত খুন মাফ। সে যতবড় অন্যায়ই করুক, তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই, বরং তাকে তেল মালিশ করা হয়।
ভাবছেন এত আদর? আরে এমন আদর তো সেই পশুকেই করা হয় যে কিছুক্ষণ পরেই কুরবানী হবে। পরীক্ষার্থীদের বেলায়ও তাই। পরীক্ষার হলে তো সে কুরবানী হতেই যাচ্ছে তাই আগে ভাগে একটু আদর এই আরকি!
তবে পরীক্ষার গুরুত্ব সময়ের সাথে সাথে কমতে থাকে। যত উপরে উঠা যায়, তত পরীক্ষার গুরুত্ব কমে। অর্থাৎ সময়ের সাথে গুরুত্বের ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আসার সাথে সাথে পরীক্ষার গুরুত্ব প্রায় শূন্যের কোটায় পৌঁছে যায়। ক্লাসটেস্ট, মিড এসব দিতে দিতে যখন সেমিস্টার ফাইনাল আসে, তখনো দেখা যায় আগের মতই হেলাফেলা ভাব রয়ে যায়।
-কিরে পরীক্ষা দিতে যাবিনা?
-আজ ভাল লাগছে না।
-আরে বেটা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা।
হুড়মুড় করে উঠে তৈরি হয়েও ছেলেটা শুধুমাত্র ঢাকনাবিহীন একটা কলম নিয়েই পরীক্ষা দিতে বের হয়।
-প্রবেশপত্র কই?
-আরে টাকা ই জমা দেই নাই। এখন গিয়া দিব।
-এসব কাহিনী করতে করতে তো তোর ঢুকতে দুঘণ্টা লেট হবে।
-তো হোক না! এমনেও দুঘণ্টা বসেই থাকতে হয় কলম মুখে দিয়ে।
-আজ ভাল লাগছে না।
-আরে বেটা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা।
হুড়মুড় করে উঠে তৈরি হয়েও ছেলেটা শুধুমাত্র ঢাকনাবিহীন একটা কলম নিয়েই পরীক্ষা দিতে বের হয়।
-প্রবেশপত্র কই?
-আরে টাকা ই জমা দেই নাই। এখন গিয়া দিব।
-এসব কাহিনী করতে করতে তো তোর ঢুকতে দুঘণ্টা লেট হবে।
-তো হোক না! এমনেও দুঘণ্টা বসেই থাকতে হয় কলম মুখে দিয়ে।
এতসবের পরও পরীক্ষার হলে ঢুকে বসতে হয়। তারপর প্রশ্ন পাওয়ার পর দশমিনিট লাগিয়ে সুন্দর করে নাম, রোল নাম্বার লিখে পাশের ছেলেটা থেকে স্কেল নিয়ে সুন্দর করে খাতাটা সাজানো শেষ করি। এটাতে যত বেশি সম্ভব টাইম দিতে হয়, কারণ বাকি সময় তো বসেই থাকবো, কিছু কাজ না করলে সবাই ভাববে এই ছেলে আসলেই অপদার্থ। এরপর সব পেজের উপরে ‘বিসমিল্লাহ’ লিখে লিখে যাই। আর কিই বা করব! উত্তরের আশায় আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই পেজের উপর ‘বিসমিল্লাহ’ লিখছে। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি আমার পেছনে বসা হিন্দু ছেলেটাও পেজের উপরে বিসমিল্লাহ লিখছে! তখন কনফিউশন এসে যায়, আরে ভাই এটাই সঠিক উত্তর নাকি!
পরীক্ষার হলে ভাল কপি করতে হলে আপনাকে হতে হবে ভাল অভিনেতা। অনেক কষ্ট করে সামনের ছেলেটাকে কনভিন্স করে তার খাতাকে ১৫ ডিগ্রি এঙ্গেলে রেখে দেখার সময় হুট করে যখন স্যার এসে পড়বে তখন আপনাকে হয়ে যেতে হবে রবীন্দ্রনাথ। মুখে কলম দিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে কিছু একটা ভাবার নাটক করতে হবে।
-কি হয়েছে? কি সমস্যা তোমার?
-কিছুনা স্যার। ভাবছি আমি আসলে।
-কি ভাবছো?
-কিছুনা স্যার। ভাবছি আমি আসলে।
-কি ভাবছো?
এটা একটা ভীষণ রকম বিরক্তিকর প্রশ্ন! আরে ভাই, কি ভাবছি সেটাও আপনাকে বলতে হবে? স্বাধীন দেশে মানুষের ভাবার ও অধিকার নাই! মনে মনে ইচ্ছে হয় স্যারকে বলি, “স্যার প্লিজ একটু অন্যদিকে যান। সামনের বেঞ্চের ছেলেটাকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি, পৃষ্টা উলটে ফেললে আর দেখাবে না” কিন্তু না! স্যার নড়বেই না, বরং পাশে কোথাও চেয়ার নিয়ে বসবে। এবং আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকবে। কোন জন্মের প্রেম আমার সাথে আপনার! নিজের বউয়ের সাথে যদি কখনো আই কন্টাক্ট করত তবে এতদিনে সে সেরা স্বামী এওয়ার্ড পেয়ে যেত জি-বাংলার তরফ থেকে।
কলম কামড়াতে কামড়াতে কলম যখন ক্ষতবিক্ষত, তখন কলম ছেড়ে হাত গুটিয়ে টেবিলের উপর আরাম করে চিবুক রেখে একটু শান্তির খোঁজ করি। কিন্তু না! শান্তি সেখানেও নেই, পেছন থেকে কিংবা আশপাশ থেকে শুরু হয়ে যাবে, “স্যার, এক্সট্রা পেপার প্লিজ!” একেকজন ৪-৫টা করে। আরে টিস্যু পেপার ও তো এত ইউজ করেনা মানুষ! আর আমি গুণে দেখি আমার তখনো মেইন খাতার এত পেজ বাকি রয়ে গেছে যে আমার উপর যাকাত ফরয হয়ে গেছে!
আমার এক বন্ধু ছিল, প্যান্টের ভেতর বই নিয়ে চলে এসেছিল। বইটা উরুর মধ্যে বাঁধা ছিল, জিজ্ঞেস করলাম “কিভাবে দেখবি?”
আমার এক বন্ধু ছিল, প্যান্টের ভেতর বই নিয়ে চলে এসেছিল। বইটা উরুর মধ্যে বাঁধা ছিল, জিজ্ঞেস করলাম “কিভাবে দেখবি?”
-সিম্পল! বাথরুমে গিয়ে প্যান্ট খুলে পড়ে নিব, তারপর এসে লিখবো।
-তো বই বাথরুমেই তো রেখে আসতে পারতি!
-এটা তো ভাবি ই নাই!
-তো বই বাথরুমেই তো রেখে আসতে পারতি!
-এটা তো ভাবি ই নাই!
বেচারা হিরোগিরি যে ভাবটা চোখে মুখে নিয়েছিলো, সেটা মূহুর্তে মিলিয়ে গেল। একটু পর স্যার ঘুমিয়ে পড়ল, পুরো হলে সবাই যে যার মত দেখাদেখি করছিলো, নকল করছিল একমাত্র আমার বন্ধুটা বাদে, কারণ সে তো প্যান্টের ভেতর নকল নিয়ে এসেছে। সে গিয়ে স্যার কে জাগাতে লাগল, বাথরুমে যাব বলে। আমাদের নকল করাও বন্ধ হয়ে গেল। মনে রাখবেন, একটা নির্বোধ বন্ধুই যথেষ্ট বরবাদির জন্য!
পরীক্ষার পুরো সময় মাথা শূন্য থাকে যেটা সময় শেষ হওয়ার ঠিক দুই মিনিট আগে সুপার এক্টিভ হয়ে যায়। তখন আইনস্টাইন-নিউটনদের আত্মা ভর করে! আর সে কি লিখা! আশেপাশের ছেলেরা তখন স্টাপলার দিয়ে খাতা আটকাচ্ছে, আর আমি তখন ফাস্ট এন্ড ফিউয়ারিয়াস-৯ দেখাচ্ছি। এরপর শিক্ষক এসে খাতা টানাটানি শুরু করে।
পরীক্ষার পুরো সময় মাথা শূন্য থাকে যেটা সময় শেষ হওয়ার ঠিক দুই মিনিট আগে সুপার এক্টিভ হয়ে যায়। তখন আইনস্টাইন-নিউটনদের আত্মা ভর করে! আর সে কি লিখা! আশেপাশের ছেলেরা তখন স্টাপলার দিয়ে খাতা আটকাচ্ছে, আর আমি তখন ফাস্ট এন্ড ফিউয়ারিয়াস-৯ দেখাচ্ছি। এরপর শিক্ষক এসে খাতা টানাটানি শুরু করে।
“স্যার দুইটা মিনিট! প্লিইজ স্যার!”
“দুই ঘণ্টা বসে ঝিমাইছিস, দুই মিনিটে কি লিখবি?”
“দুই ঘণ্টা বসে ঝিমাইছিস, দুই মিনিটে কি লিখবি?”
স্যারকে কে বোঝাবে যে আমার মধ্যে সত্যিই একটি সুপারপাওয়ার ভর করেছে, আমি আসলেই লিখতে পারব। অবশেষে স্যারের টানাটানির কাছে হার মানতে হয়। অসহায় আত্মসমর্পণ করে বসে থাকি আর হিসেব মেলাই। পাশের বন্ধুরা আলোচনা করে এই উত্তর টা এমন হবে, ঐ উত্তরটা অমন হবে, আমি তখন ভাবি, এই প্রশ্নটায় একই লাইন কয়বার লিখেছিলাম! বন্ধুদের মধ্যে ঝগড়া হয় উত্তর 4.31 হবে নাকি 4.13। আর আমি 390.45 উত্তর লিখে হুড়মুড় করে চলে আসি। আর মনে মনে ভাবি, “A single sheet of paper can’t decide my future!”
পরীক্ষার সুমধুর স্মৃতি কল্পনা করতে করতে যেন হারিয়েই গেছিলাম। ঘোর কাটল হঠাৎ ই একজনের বিকট কণ্ঠে, “মামা, জোরে টানো, পরীক্ষা আছে!