ইনবক্সে আমি কিছু প্রশ্ন পেয়েছি এমন, "আমরা কীভাবে বুঝবো মুহাম্মদ (স) নামে একজন এক্সিস্ট করতেন। কীভাবে বুঝবো তাঁর ব্যাপারে যা কিছু প্রচলিত সেগুলো কোনো মিথ বা লেজেন্ড (কল্পকাহিনী) না?"
দেখেন, ফিলোসফিতে কোনো কিছু জানার বা জ্ঞান অর্জন করার দুটো উপায় আছে। একটা হচ্ছে, যা কিছু আমরা দেখি, এভিডেনশিয়াল প্রুফ বলে সেটাকে। যেমন আমরা দেখি সূর্যকে আলো দিতে। তাই আমরা বলি, হ্যাঁ সূর্য আলো দেয়। এছাড়া আরেকটি সোর্স আছে, একে বলে টেস্টিমোনি। কোনো বই পড়ে জানা, কারো কাছে শোনা এগুলো হচ্ছে টেস্টিমোনি। যেমন আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছে এটা আপনি সেখানে সশরীরে উপস্থিত হয়ে দেখেন নি, এটা আপনি নিউজে দেখেছেন, ওখানে থাকা কোনো বন্ধু/আত্মীয়ের মাধ্যমে শুনেছেন, ফেসবুকে দেখেছেন। এবং আপনি বিশ্বাস করেছেন। এগুলো সবই টেস্টিমোনিয়াল বিলিফ।
টেস্টিমোনিয়াল বিলিফ ফর্ম করতে গেলে কিছু জিনিস চেক করতে হয়। যেই সোর্স থেকে বা যার থেকে জ্ঞান অর্জন করছি সে সত্য বলছে এবং তার ভুল বা ভ্রম হয়নি। ইতিহাস বলেন, বিজ্ঞান বলেন, প্রত্যেকটা বিষয়ে আমাদের যেই জ্ঞান আছে, অধিকাংশই টেস্টিমোনিয়াল বিলিফ। যেমন পৃথিবী গোল এবং সূর্যের চারদিকে ঘোরে এটা একটা টেস্টিমোনিয়াল বিলিফ। সিরাজঊদ্দৌলা এক্সিস্ট করতেন এটা একটা টেস্টিমোনিয়াল বিলিফ। এভাবে আমাদের অধিকাংশ বিশ্বাসই টেস্টিমোনিয়াল।
এখন আসি রাসূল (স) এক্সিস্ট করতেন কী-না। তাঁর জীবনী, তাঁর কথা, তাঁর কাজ সবকিছু একটা সুন্দর সংরক্ষণ প্রকৃয়ার মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়েছে। সেই প্রকৃয়াটি একটি বিজ্ঞান। বিশুদ্ধতা নির্ণয়ের নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। হাদীস সংরক্ষণের এই ক্রমধারাকে বলা হয় ইসনাদ। হাদীসগুলোর ক্রমধারা পার্সন বাই পার্সন বর্তমান সময় থেকে একেবারে রাসূল (স) পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব। সম্পূর্ণ সনদ ও রাবী পরম্পরা মুহাদ্দিসিনদের কাছে লিপিবদ্ধ আছে৷ একটা হাদীস বর্ণনায় কে কে আছেন, সম্পূর্ণ চেইন সংরক্ষিত আছে নির্ভূলভাবে। এটা হাজার বছর ধরে চলে আসা এক বিজ্ঞান।
এখন আসুন এই টেস্টিমোনিগুলো যাচাই কীভাবে করা হয়। সেটা আরো ইন্টেরেস্টিং। যিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাঁকে অনেকগুলো ক্রাইটেরিয়া অতিক্রম করতে হয় বিশুদ্ধতা প্রমাণের জন্য। বর্ণনাকারীর নাম, পিতার নাম, পেশা এবং সম্পূর্ণ পরিচয় জানা থাকতে হয়। অচেনা হওয়া যাবেনা। তার সম্পর্কে বিস্তারিত খবর নেয়া হয়। তার স্মৃতিশক্তি দুর্বল কী-না, সে মিথ্যা বলতো কী-না, তার চরিত্র কেমন ছিলো, সে ধার্মিক ছিলো কী-না, এইসব ক্রাইটেরিয়া দেখা হয়। ঠিকঠাক না পেলে হাদীস গ্রহণ করা হয়না। একটি হাদীস অনেক বর্ণনাকারী দ্বারা বর্ণিত হলে ওটার বিশুদ্ধতা, আর কম বর্ণনাকারী দ্বারা বর্ণিত হলে ওটার বিশুদ্ধতা, দুটো সমান নয়। এরকম আরো অসংখ্য ক্রাইটেরিয়া ম্যান্টেন করে হাদীস সংরক্ষণ করা হয়েছে হাজার বছরের পরম্পরায়। বিস্তারিত জানতে ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহর এহইয়াউস সুনান ও হাদীসের নামে জালিয়াতি গ্রন্থ দুটি পড়তে পারেন।
অর্থাৎ, যেই টেস্টোমোনির ধারার মাধ্যমে রাসূল (স) এর জীবনী, তাঁর কথা-কাজ সংরক্ষণ করা হয়েছে তা একদমই সলিড, চ্যালেঞ্জযোগ্য নয়। ১৪০০ বছর আগের রাসূল (স) এর অস্তিত্বের ঘটনার চেয়ে বরং মাত্র কয়েকশো বছর আগের সিরাজঊদ্দৌলার অস্তিত্বের ঘটনার টেস্টিমোনি দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
প্রিয় ভাইবোনেরা, কারো কথায় ঘাবড়ে যাবেন না। পড়াশোনা করুন। না জানলেই আপনি আক্রমণের স্বীকার হবেন, জিজ্ঞাসার স্বীকার হবেন, ঈমান দুর্বল হবে। এজন্যই আল্লাহ কুরআনে সর্বপ্রথমই বলেছেন, 'পড়ো'। আল্লাহ আমার ভাইবোনদের ঈমানকে হেফাজত করুন।
বারাকাল্লাহু ফীক।