নাস্তিকদের সব অভিযোগের জবাব দিন মাত্র দুই বাক্যে!


শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকদের সব অভিযোগের জবাব মাত্র দুটি বাক্যেই দেয়া সম্ভব। তবে এজন্য মোরাল ফিলোসফি সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা আইডিয়া দিতে হবে। 

কয়েক যুগ থেকেই ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকরা ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। কখনো রাসূল (স) এর যুদ্ধ নিয়ে, কখনো তাঁর বিয়ে নিয়ে, কখনোবা দাসপ্রথা নিয়ে। প্রায় সব প্রশ্নের প্যাটার্নই এক। তিনি কেন বনু কুরাইযার সব পুরুষকে হত্যা করেছিলেন? এটা খুব নির্মম! কেন তিনি আয়িশা (রা) কে মাত্র ৬ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন? তিনি নারীলোভী! কেন ইসলাম দাসপ্রথা সমর্থন করে? এটা বর্বর! 

পাঠক, একটা বিষয় লক্ষ্য করলে দেখবেন, তারা শুধু প্রশ্ন করছে না, সাথে একটা জাজমেন্ট জুড়ে দিচ্ছে। জাজমেন্টগুলোর সারকথা হচ্ছে, ইসলাম যেই কাজগুলো করেছে বা রাসূল (স) যেই কাজগুলো করেছেন সেগুলো 'অনৈতিক'। এখানেই আমাদের আলোচনা শুরু হয়। 

নৈতিকতা এবং অনৈতিকতা নিয়ে দর্শনের যেই পাঠ তাকে বলা হয় 'মোরাল ফিলোসফি' বা 'নৈতিক দর্শন'। নৈতিকতা মূলত তিন ধরণের। অবজেক্টিভ, রিলেটিভ এবং ইমোটিভ। মূল আলোচনা হয় অবজেক্টিভ এবং রিলেটিভ মোরালিটির একটা চরম রূপ যেটা সাবজেক্টিভ মোরালিটি নামে পরিচিত এই দুটো নিয়ে। এই দুটোর আমি সংজ্ঞায়ন করছি, একটু বোঝার চেষ্টা করুন। 

অবজেক্টিভ মোরালিটি হচ্ছে কিছু সার্বজনীন নৈতিক নিয়ম যেগুলো ব্যক্তি, সমাজ, কালভেদে পরিবর্তন হয়না। এই পৃথিবীতে নৈতিকতা, অনৈতিকতার কিছু বাইনারী নিয়ম আছে। যেমন- মিথ্যা বলা অনৈতিক, হত্যা করা অনৈতিক। এমন না যে জনাব করিমের জন্য মিথ্যা বলা অনৈতিক কিন্তু জনাব সলিমের জন্য নৈতিক। বরং, এটা সর্বজনীন। এই অবজেক্টিভ মোরালিটির দাবিদার হচ্ছে বিভিন্ন ধর্মের মানুষজন, যেমন- আমরা মুসলিমরা। 

আমরা দাবি করি, সৃষ্টিজগতের পালনকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীনের কাছ থেকে আমরা ওহীর মাধ্যমে নৈতিকতার কিছু স্ট্যান্ডার্ড পেয়েছি। কোন কাজটা নৈতিক, কোন কাজটা অনৈতিক তার একটা সুস্পষ্ট set of rules পেয়েছি। আর এগুলো ব্যক্তিভেদে পরিবর্তন হয়না, সমাজভেদে, সময়ভেদে পরিবর্তন হয়না। এগুলো সর্বদা ধ্রুব। এটাই অবজেক্টিভ মোরালিটি। 

অনেকেই অবজেক্টিভ মোরালিটির সাথে এবসলিউট মোরালিটি গুলিয়ে ফেলেন। যেমন- হত্যা করা অনৈতিক। এখন কেউ বলতেই পারেন যে, সেল্ফ ডিফেন্সে হত্যা করা কি অনৈতিক? কিংবা অন্যায়ের শাস্তিস্বরূপ? উত্তর হচ্ছে না, অনৈতিক না। তাহলে কি অবজেক্টিভ মোরালিটির সংজ্ঞা ভায়োলেট হচ্ছে? একদমই না। অবজেক্টিভ মোরালিটি হচ্ছে set of rules. এখানে নৈতিকতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে কন্ডিশনও সেট করা থাকে। যেমন- জানের ওপর আঘাত আসলে মিথ্যা বলাও নৈতিক, সেল্ফ ডিফেন্সে হত্যা করা নৈতিক, এগুলো নিয়মেরই অন্তর্ভুক্ত। আর এই নিয়মগুলো সদা অপরিবর্তনীয়। কিন্তু যদি এমন বলা হতো, কোনো অবস্থাতেই মিথ্যা বলা বৈধ না, হত্যা করা বৈধ না, তাহলে সেটাকে বলা হতো এবসলিউট মোরালিটি। দুইটায় তফাৎ আছে, বোঝা গেছে?  

এবার আসি, সাব্জেক্টিভ মোরালিটি কী? সাব্জেক্টিভ মোরালিটি হচ্ছে, নৈতিকতা ধ্রুব না। এটা ব্যক্তিভেদে, সমাজভেদে, সময়ভেদে ভিন্ন হতে পারে। তাই তারা নৈতিকতার একটা স্ট্যান্ডার্ড আছে এই বিষয়টা অস্বীকার করে। যেখানে অবজেক্টিভিস্টরা দাবি করে ২+২=৪ যেমন সত্য, তেমনই নৈতিকতারও কিছু ধ্রুব সত্য আছে। যেমন মিথ্যা বলা অনৈতিক, চুরি করা অনৈতিক ইত্যাদি৷ এগুলো ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হয়না। কিন্তু সাব্জেক্টিভিস্টরা বলে, না। এটা ধ্রুব না, একেক ব্যক্তির জন্য একেকরকম। একেকজনের নৈতিক অবস্থান একেকরকম হতে পারে। যেমন- কোনো কোনো ব্যক্তির কাছে সমকামিতা নৈতিক হতে পারে, কোনো কোনো ব্যক্তির কাছে অনৈতিক হতে পারে। স্ট্যান্ডার্ড বলে কোনোকিছু নেই, যার যার চয়েজ। 

আশা করি পার্থক্যটা কিছুটা বুঝতে পেরেছেন। এই হলো ব্যাসিক পাঠ। এখন আবার আগের টপিকে ফিরে যাই। একজন নাস্তিক যখন রাসূল (স) এর কোনো একটা কাজকে অনৈতিক বলছে বা ইসলামের কোনো একটা অবস্থানকে অনৈতিক বলছে, তাকে প্রথম যেই প্রশ্নটি করবেন তা হলো- 

"তুমি কি অবজেক্টিভ মোরালিটিতে বিশ্বাস করো নাকি সাব্জেক্টিভ?" 

উত্তরে যদি সে বলে- "আমি সাব্জেক্টিভ মোরালিটিতে বিশ্বাস করি", তবে কি তার আর ক্রিটিসাইজ করার সুযোগ আছে পাঠক? কারণ সে তো মনে করে নৈতিকতা ধ্রুব না, একেক ব্যক্তির, একেক সমাজের নৈতিক অবস্থান একেকরকম হতে পারে, কোনো স্ট্যান্ডার্ড নেই, তাহলে সে কীভাবে কোনো একটা কাজকে 'নৈতিক' বা 'অনৈতিক' বলতে পারে? গট ইট? 

কিন্তু...

উত্তরে সে যদি বলে- "আমি অবজেক্টিভ মোরালিটিতে বিশ্বাস করি", তাহলে তাকে যেটি বলবেন তা হলো- 

"তোমার অবজেক্টিভ মোরাল ভ্যালুগুলোর মানদণ্ড কি? তোমার নৈতিকতার যেই মানদণ্ড, সেটি যে সত্য তার প্রমাণ দাও! যখন তুমি তোমার নৈতিকতা সত্য বলে প্রমাণ করবে, তারপর তুমি ইসলামকে ক্রিটিসাইজ করবে, এর আগে নয়।" 

এই জায়গায় পাঠকের হয়তো বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। বুঝিয়ে বলছি। 

ধরুন আপনি পরীক্ষা দিয়েছেন। সেখানে কিছু প্রশ্ন ছিলো, সেগুলোর উত্তর লিখেছেন। এখন, আপনার উত্তরগুলো ঠিক নাকি ভুল, এটা কে যাচাই করতে পারবে? যে সঠিক উত্তরগুলো জানে, সে যাচাই করতে পারবে। এখন ধরুন, একজন এসে বললো আপনার উত্তরগুলো ভুল। আপনি কেন তাকে মেনে নেবেন? আগে তো তাকে প্রমাণ দিতে যে, সে যেই উত্তরগুলো জানে সেগুলো প্রকৃতপক্ষেই সঠিক এবং সেগুলোর উপর ভিত্তি করে সে আপনার উত্তরকে ভুল বলছে। আমি সেই প্রমাণের কথাই বলছি। 

এখন বলতে পারেন, নাস্তিকরাও তো আমাদের কাছে প্রমাণ চাইতে পারে। ওয়েল, অবজেক্টিভিস্টরা বিশ্বাস করে মোরাল ট্রুথ বলে কিছু একটা আছে এবং সেটা ধ্রুব ও সর্বজনীন। চুরি করা একই সাথে নৈতিক এবং অনৈতিক হতে পারেনা। অবশ্যই যেকোন একটি হবে। এখন 'চুরি করা অনৈতিক' এই কথাটি যে সত্য তা আমরা কীভাবে জানবো? উত্তর সহজ! আমরা এটা জানবো একজন এক্সটার্নাল অথোরিটি থেকে, যিনি হচ্ছে স্রষ্টা। তিনি জানেন তাঁর সৃষ্টির জন্য কোনটা 'নৈতিক' আর কোনটা 'অনৈতিক'। আর একমাত্র তিনিই সেই স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করে দিতে পারেন। তাই, আমাদের নৈতিকতা সত্য।  

আমাদের নৈতিকতা সত্য কী-না এই প্রশ্ন তোলার বদলে আমাদের স্রষ্টা এবং ধর্মগ্রন্থ সত্য কী-না সেটা প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। আর সেটা একটা বিশদ টপিক। অবশ্যই আমরা প্রমাণ দিতে পারি। এবং অনেক আলোচনা, বই আছে এসবের ওপর। 

কিন্তু.. 

একজন নাস্তিক তার নৈতিকতা সত্য এটা কীভাবে প্রমাণ করবে? তার তো স্রষ্টা নেই। ফলে তাকে নৈতিকতার কোনো একটা অবজেক্টিভ স্ট্যান্ডার্ড ফলো করতে হবে যেটা মনুষ্য সৃষ্ট। মনুষ্য সৃষ্ট স্ট্যান্ডার্ড ফল্টি এবং বায়াসড হবে এটা বলাই বাহুল্য তাও আপনারা শুনবেন, তার স্ট্যান্ডার্ড কি। এবং তাকে বলবেন, সে যেন তার স্ট্যান্ডার্ড প্রমাণ করে। সেটা যে সত্য তা যেন সে প্রমাণ করে দেখায়। এবার সেটা যাই হোক! ওয়াল্লাহি, পারবেনা। আর যদি না পারে, তবে মানবো কেন? তবে কেন তার কথায় আমরা এপোলোজেটিক হবো? এটা তো সেই পরীক্ষার খাতা দেখার মতোই ব্যাপার হলো। সে প্রশ্নগুলোর যেই উত্তর জানে সেগুলো যে সত্য এবং সঠিক তা যদি প্রমাণ করতেই না পারে, তাহলে আমি তার কথায় আমার প্রশ্নগুলোকে ভুল কেন মনে করবো বা সংশয়ে ভুগবো? বোঝা গেছে? 

একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বলে দেই। অধিকাংশ নাস্তিক নৈতিকতার স্ট্যান্ডার্ড জানতে চাইলে ইউটিলিটারিয়ানিজমের কথা বলে, হার্ম প্রিন্সিপালের কথা বলে। তাদেরকে স্ট্রেইটফরোয়ার্ড জিজ্ঞেস করবেন, ইউটিলিটারিয়ানিজম (উপযোগবাদ) যে সত্য, তা প্রমাণ করো। হার্ম প্রিন্সিপাল সত্য তা প্রমাণ করো। যদি প্রমাণ করতে না পারো, তাহলে চুপ থাকো। তোমার প্রশ্নের, অভিযোগের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই। 

প্রিয় মুসলিম ভাইবোনেরা, এপোলোজেটিক হবেন না। অল্পেই ভয় পাবেন না। ইসলাম এতো ঠুনকো নয় যে কয়েকটা নাস্তিকদের কয়েকয়া আর্গুমেন্টেই মিথ্যা হয়ে যাবে। ইসলাম সত্য। আল্লাহর অস্তিত্ব সত্য, রাসূল (স) এর শেষনবী হওয়া সত্য, কুরআনের ওহী হওয়া সত্য, আখিরাহ সত্য, মালাইকাগণ সত্য, নবী-রাসূলগণ সত্য, তাক্বদীর সত্য। ভয় পাবেন না, সংশয়ে ভুগবেন না। পড়ুন! সত্য আবিষ্কার করবেন প্রতিনিয়ত ইন-শা-আল্লাহ।


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.