ধর্ষণঃ ইসলাম বনাম পাশ্চাত্য

 ধর্ষণ নিয়ন্ত্রণে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কতোটুকু অকার্যকর এবং পাশ্চাত্যের এপ্রোচ কতোটুকু কার্যকর এই মর্মে কিছু লেখা দেখলাম। আমি ছোটো করে কিছু পয়েন্ট বলি। 


তাত্ত্বিক আইন ইসলামে নেই, ইসলামে সবই ব্যবহারিক। ইসলামী এপ্রোচগুলো খেয়াল করেন।

-পুরুষকে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ ও লজ্জাস্থান হেফাজত করতে বলা হয়েছে।

-নারীদেরকে পর্দা ও মাহরাম ছাড়া কোথাও যেতে নিষেধ করা হয়েছে৷ 

-নারী পুরুষকে বালেগ হতেই বিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

-অশ্লীলতার প্রচারকে ঘোরতর পাপ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। 

-নারীকে পুরুষ যেন নিজের সম্পদের মতো ট্রিট করে, প্রোটেক্ট করে, যত্ন নেয় সেই শিক্ষা দেয়া হয়েছে। 

-পারিবারিক ও ধর্মীয়ভাবে নৈতিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। 

এইযে ধর্ষণের কারণগুলো ঘাঁটলে দেখবেন শুরুতেই আসবে বেপরোয়া পর্নোগ্রাফির বিস্তার, নারীর অবজেক্টিফিকেশন, এরপর আসে আইনের ফাঁকফোকর ও শেল্টার ঐতিহ্য। 

পর্নোগ্রাফির বিস্তার তো ইসলামী সমাজে কোনোভাবেই সম্ভব না, কারণ ইসলামী সমাজে পর্নো ইন্ডাস্ট্রিই থাকবেনা যেখানে পুঁজিবাদি বিশ্ব বিলিয়ন ডলার এই ইন্ডাস্ট্রিকে লালন-পালন করে। 

নারীকে সম্পদের মতো ট্রিট করতে শেখানোটা পারিবারিক এবং ধর্মীয়ভাবেই এস্টাবলিশড। মাহরাম বাদে অন্যদের দিকে তাকানোরই তো সুযোগ নেই, তাহলে অবজেক্টিফিকেশনের সুযোগই আসবে না। আর নারী নিজেকে পোশাকে আবৃত রাখবে, দৈহিক সৌন্দর্য্যকে প্রদর্শন করে নিজেকে লাস্যময়ী হিসেবে উপস্থাপন করবেনা, যেটা ইসলাম বলে। এসব হলে আর অবজেক্টিফিকেশন এক্সিস্ট করবে?

এরপর আসি শাস্তি। 

ইসলামে ধর্ষণের বিচার নিয়ে দুটো মত আছে। একটা হচ্ছে সাধারণ যিনা ও ব্যভিচারের যেই আইন সেই আইনে বিচার হবে। এক্ষেত্রে অবিবাহিত পুরুষকে একশো দোররা মারা হবে আর বিবাহিত পুরুষকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে।

দ্বিতীয় মতটা হচ্ছে 'হারবাহ' যেটা সূরা আল মায়িদার ৩৩ নং আয়াত থেকে আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত হয়েছে। আর তা হচ্ছে জমিনে ফিতনা ও ফাসাদ তৈরি করা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। বেশিরভাগ তাফসীরেই 'শির্ক' করাকে এখানে উদ্দেশ্য করা হয়েছে বলে বলা হয়েছে। তবে কেউ কেউ অন্যান্য অপরাধও এর মধ্যে ইনক্লুড করেন। ধর্ষণকে এই হারবাহ হিসেবে ধরা হলে, ধর্ষণের শাস্তি স্ট্রেইট মৃত্যুদণ্ড এবং মর্মান্তিক সব উপায়ে। 

কিন্তু যদি হারবাহ নাও হয়, সাধারণ যিনা-ব্যভিচার আইনেও যদি শাস্তি দেয়া হয়, তাও হিকমাহ আছে এতে। বলতে পারেন, অবিবাহিত পুরুষের জন্য শাস্তিটা কম হয়ে যায়৷ কিন্তু আপনাকে দেখতে হবে, ইসলামে মূলত অবিবাহিত পুরুষ কারা? বেশিরভাগ নাবালেগ বাচ্চারাই অবিবাহিতের আন্ডারে পড়বে, যেহেতু ইসলামে বালেগ হলেই বিবাহ দেয়া শর্ত এবং কোনো কোনো খিলাফতের সময়ে বালেগ হওয়ার পর বিয়ে না দিলে শাস্তির ব্যবস্থাও ছিলো। সুতরাং, নাবালেগ ছেলের জন্য জনসম্মুখে একশো দোররা কিন্তু কঠিন শাস্তি। শারিরিক, মানসিক দুরকমই। আর বিবাহিত হলে তো হত্যা করা পর্যন্ত পাথর ছোঁড়া! শাস্তিটা প্রকাশ্য হওয়ার হিকমাহ হচ্ছে, যারা এই শাস্তি নিজ চোখে দেখবে, তারা আর কখনো এই অপরাধে লিপ্ত হওয়ার সাহস করবেনা। আর এটাই প্র‍্যাক্টিকাল সলিউশন!

এতো আলোচনার প্রয়োজন পড়েনা, যদি স্ট্রেইট 'হারবাহ' নীতিতে পড়ে। 

এইতো গেলো আইনের কথা। এবার আসেন, এগুলো কতোটুকু প্র‍্যাক্টিকাল হয়েছিলো। ওয়েল, খোলাফায়ে রাশেদার ইতিহাস ঘাঁটেন। রাসূল (স) জাহিলিয়্যাতের সময়ে একবার ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, এমন একটা সময় আসবে, যখন একটা নারী অভিভাবক ছাড়া উটে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করতে পারবে আর তখন সে শুধুমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করবেনা। এতোটাই সেইফ হবে জনপদ! আর সেটার প্রতিফলন দেখা গিয়েছিলো খোলাফায়ে রাশেদার আমলে। নারীর সম্মানের ব্যাপারে খলিফা মু'তাসিম, মুহাম্মদ বিন কাসিমের ঘটনা তো অনেকেরই জানা আছে। আর অপরাধ এতো কমে এসেছিলো যে শাস্তি দেয়ার প্রয়োজনই পড়তো না। কারণ মানুষ এই শাস্তির ভয়াবহতা দেখেই অপরাধ থেকে গুটিয়ে গিয়েছিলো। এটাই হচ্ছে প্র‍্যাক্টিকাল আইন, আল্লাহর আইন। 

অনেকেই সৌদির উদাহরণ টানেন। আমি এটা বলতে পারি, সৌদিকে দিয়ে প্রকৃত ইসলামী খিলাফাহকে কেউ জাজ করবেন না। যদিও সেটা স্ট্রং আর্গুমেন্ট কিন্তু আমি বলবো না। আমি বলবো তাও সৌদির রেইপ রেইট দেখেন, আর আমেরিকার রেইপ রেইট দেখেন। চেতনার ফেরিওয়ালা আমেরিকা, লিবারেল ফিলোসফির দেশ আমেরিকায় রেইপ, সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট রেইট দেখলে আঁৎকে উঠবেন! আমি পরিসংখ্যান দিবো না, আপনি একটু গুগল করেই দেখেন। 

তারা তো 

-ফিজিকাল ডিসট্যান্স কমিয়ে আনা

-নারী পুরুষের কো এক্সিস্ট্যান্স নিশ্চিত করা

-সেক্স এডুকেশন দেয়া 

-উইম্যান রাইটস সংরক্ষণ

সবই করে(যেগুলোকে বাঙালী পাশ্চাত্যবাদীরা সলিউশন হিসেবে সাজেস্ট করছে আরকি), তাহলে তাদের দেশে এই অবস্থা কেন? কারণ হচ্ছে, তাদের এপ্রোচ ভুল, অবশ্যই ভুল। শুধু ভুল না, ইমপ্র‍্যাক্টিকাল। লিবারেলরা তো অপরাধীকে শাস্তির পরিবর্তে কাউন্সিলিং এ বিশ্বাসী! এদের জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, নিজেদের স্ত্রী-কন্যাকে রেইপ করেছে, এরকম কাউকেও কি তারা কাউন্সিলিং করবে নাকি পাব্লিকলি হত্যা করবে? 

এইতো গেলো একটুখানি তুলনা। এখন বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিক। ইমপ্র‍্যাক্টকাল লিবারেল আইন গ্রহণ করবে, তাদের ফিলোসফিকে রেইপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করবে, নাকি প্র‍্যাক্টিকাল ইসলামিক এপ্রোচ ফলো করবে?

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.