"ধর্ষণের জন্য পর্দা দায়ী নাকি মানসিকতা?"


এটি আমাদের সমাজের বহুল প্রচলিত একটি ডিবেট। এই ডিবেটে অবলীলায় অংশ নেয় ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গভেদে শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত, জ্ঞানী কিংবা মূর্খ, শুদ্ধ কিংবা টাকলা সব রকমের মানুষ। কি আছে এই ডিবেটে? আমি ঘেঁটে দেখলাম এই ডিবেটে আছে রস, সেই রস আস্বাদন করা যায় অন্যকে আক্রমণ করে, কিংবা যুক্তি-কুযুক্তি সহকারে তর্ক করে। কিন্তু দিনশেষে ফলাফল শূন্য! আমি আজকে এই ডিবেটের একটা ইতি টানার উদ্দেশ্য নিয়ে এবং বুকে অসীম সাহস নিয়ে লিখছি। সাহস বলছি এজন্য কারণ আমি এই তর্কের ঠিক মাঝখানে পড়তে চাইছি। একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই আমি হয় পার্ভার্ট নাহয় নারীবাদী বনে যাব। আর সেটি যেন না হয়, তাই আমার টার্গেট অডিয়েন্স বলে নিচ্ছি আগেভাগেই। আমার টার্গেট অডিয়েন্স হচ্ছে মুসলিম পুরুষ এবং মুসলিমা নারী। এর বাইরের কেউ এই পোস্টটির মূল বক্তব্য বুঝতে ব্যর্থ হতে পারেন এবং লেখকের প্রকৃত বক্তব্য বুঝতে না পেরে অকারণে চটেও যেতে পারেন৷
আসলে ভয়াবহ এই প্রশ্নটিতে ভিন্নধর্মালম্বীরা ডিবেট করলেও মুসলমানদের ডিবেট করাটাই অনর্থক। কেন সেটাই ব্যাখ্যা করছি।
পুরুষ এবং নারী এই দুই শ্রেণি এই ডিবেটে আসলে যে দুটো স্টেটমেন্ট ছুঁড়ে দেয় তা হল-
পুরুষের ক্ষেত্রে 'পুরুষ তো তাকাবেই, তুমি পর্দা করো না কেন?' 'খাবার খোলা রাখলে মাছি বসবেই' ইত্যাদি এবং নারীদের ক্ষেত্রে, 'আমি নগ্ন চললেও তোমার কি?'। এই দুপক্ষের দুটো স্টেটমেন্টই একেবারেই উগ্রপন্থা বলে আমি মনে করি। তাই এই দুটো নিয়েই বলব। মাঝামাঝি অনেক বক্তব্য আছে যা নিয়ে আমি এখানে কিছু বলছি ও না, তাই কমেন্টেও কারো এই দুটো স্টেটমেন্টের বাইরের বক্তব্য আশা করছি না।
পুরুষদের পক্ষ থেকে যে স্টেটমেন্ট দেয়া হয়, "আপনি পর্দা করেন, রাতে বের হবেন না তাহলেই ধর্ষণ থেকে বাঁচবেন।" এই বক্তব্যটার ইন্ডিরেক্ট অর্থ হচ্ছে, পুরুষ তো তাকাবেই, আপনি ঢেকে আসেন। এই স্টেটমেন্ট একজন মুসলমানের জন্য ইনভ্যালিড। আপনি যদি মুসলমান হয়ে থাকেন, তবে আপনি একজন পুরুষ হলেও আপনার উপর পর্দা ফরজ। আপনার দৃষ্টিকে অবনত রাখার নির্দেশ আছে। আপনি ইচ্ছে করলেই কোন একটা মেয়ের দিকে তাকাতে পারেন না, খারাপ নজরে তো একদমই না! কারণ আল্লাহ সূরা নূরের ৩০ নং আয়াতে স্পষ্ট করেই মূমিনদের দৃষ্টি অবনত রাখতে বলে দিয়েছেন এবং বলেছেন লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে। এবার কেউ যদি আপনার পাশ দিয়ে উলঙ্গও হেঁটে যায়, আপনার তাকানোর অনুমতি নেই। যদি বলেন মুসলিম নারী পর্দা করবে না কেন, যদি সেটা মুসলিম নারী না হয়? অন্য ধর্মালম্বীদের তো পর্দার বিধান নেই, তাদেরকে আপনি কি বলবেন? আর যদি কোন মুসলিমা পর্দা না করে, তার ফয়সালা আল্লাহ করবেন এবং সে শাস্তি ভোগ করবে। আপনি না তাকিয়ে আগে আপনার শাস্তি বাঁচান! পরিষ্কার?
এবার আসি নারীদের স্টেটমেন্টের কথা। অনেক মুসলিমা আপু বলে থাকেন, পুরুষদের তো না তাকাতে বলা হয়েছে, আমরা যদি বেপর্দা চলি তাতে কি? তাহলে বলব, আপনার এই স্টেটমেন্টটিও ইনভ্যালিড। আপনি যদি একজন মুসলিমা নারী হয়ে থাকেন, তবে আপনার উপর পর্দা ফরজ৷ এবার কোন পুরুষ তাকালো কি না তাকালো সেটা মাইনে রাখে না৷ সূরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াত পড়লে আপনাদের কিছুটা উপকার হতে পারে।
“(হে নবী!) আপনি আপনার পত্মীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, যখন কোন প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হয়, তখন তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরাহ আহযাব, আয়াত : ৫৯)।
এখানে আল্লাহ পর্দা ফরজ করেছেন। পর্দা কতটুকু করতে হবে সে প্রসঙ্গে হাদীসে বলা আছে, তা আমার আলোচনার বিষয়বস্তু নয়। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন আল্লাহ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, পর্দা করতে যেন তাদেরকে উত্যক্ত করা না হয়! এখন আপনি বলতে পারেন, পুরুষ কেন তাকাবে? তাকে তো নিষেধ করা হয়েছে। সে যদি অমুসলিম হয়? তার তো এমন বিধান নেই! এখন আপনি বলতে পারেন, পর্দা করা নারীরাও ধর্ষণ হচ্ছে। অবশ্যই হচ্ছে, ছোট মেয়েরাও ধর্ষিত হচ্ছে, আর সেটার জন্য এই ভয়ংকর সমাজব্যবস্থা- বিশেষ করে পাশ্চাত্য ভাবধারা, মূল্যবোধের হানি আর পর্ণোগ্রাফির ভয়াবহ বিস্তার, যথাযথ আইন প্রয়োগের অভাব এমনকি সমাজে বিয়ে কঠিন হওয়াও দায়ী। দেশে আইনের শাসন থাকা অবস্থায়ও মানুষ খুন হয়, তাই বলে আপনি বলতে পারেন না আইনই উঠিয়ে দিন! আর পর্দা হচ্ছে মুসলিমা নারীর অলংকারের মত। নারী হচ্ছে ফুল, পাপড়িবিহীন ফুল যেমন অসুন্দর, অনিরাপদ, তেমনি পর্দাবিহীন নারীও তাই। আপনার সৌন্দর্য্য আপনার সম্পদ, এটি যত্নে লুকিয়ে রাখা উচিত। পরিশেষে, পর্দা আল্লাহ ফরজ করেছেন, তাই আপনি পর্দা করবেন, এ নিয়ে তর্কের সুযোগ নাই।
এই হল সর্বসাকুল্যে ডিবেটের সমাপ্তি। আমি আশা করি এরপর থেকে কোন মুসলিম ভাই কিংবা মুসলিমা বোন 'ধর্ষণের জন্য পর্দা দায়ী নাকি মানসিকতা' মর্মে কোন তর্কে লিপ্ত হবেন না। জাযাকাল্লাহু খাইরান।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.