সমকামিতা কেন অপরাধ?

 এক হলিউড সিনেমায় দেয়া একটি মেসেজ আজকালের ট্রেন্ডটির সাথে চমৎকারভাবে খাপ খেয়ে যায়৷ সেখানে দেখানো হয়েছিলো সিনেমার নায়ক এক সংবাদকর্মী সবসময় তার লাইফ নিয়ে বিভিন্ন অভাব-অভিযোগ গডকে জানাতে থাকতো, তাঁকে দায়ী করতে থাকতো। শেষে গড তাঁর পাওয়ার কয়েকদিনের জন্য ঐ লোককে দেন। আর সেই পাওয়ার ব্যবহার করতে গিয়ে সে বিপত্তিতে পড়ে। তার কাছে এতো এতো বেশি প্রেয়ার আসতে থাকতো, সে আলাদা করে শোনার সুযোগ পেতো না, শেষে সে সব প্রেয়ারগুলোকে একসাথে একসেপ্ট করে ফেলে। আর এতেই অরাজকতা শুরু হয়ে যায় বিশ্বজুড়ে। যতোজন মানুষ লটারি কিনেছিলো সবাই লটারি জিতে যায়, পুরষ্কার নিয়ে বেধে যায় মারামারি। অপরাধীরা সব জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যায়। এরকম আরো অসংখ্য ঘটনা ঘটে, যা থেকে সে বুঝতে পারে গডের কাজ অতো সহজ নয়। তেমনি পৃথিবীর সবার দোয়া কবুল হয়ে গেলে পৃথিবী যে কী পরিমাণ অরাজক হয়ে উঠবে তাও বুঝতে পারে সে। (সিনেমাটির নাম দয়া করে কেউ কমেন্টে নেবেন না প্লিজ। উদাহরণের জন্য বলা, প্রোমোট করা যাবেনা।) 


এই পুরো ঘটনাটির অবতারণা করলাম একটি মেসেজের জন্য। তা হচ্ছে, যদি পৃথিবীর সবার ইচ্ছে পূরণ হতো? যদি পৃথিবীর সবাই তার ইচ্ছেমত কাজ করার সুযোগ পেতো? সাউন্ডস ইন্টেরেস্টিং, কিন্তু আদতে এটি হতো ভয়াবহ। ভাবুন, তখন হত্যাকারীরা তাদের ইচ্ছেমতো হত্যা করতেই থাকতো৷ ধর্ষণকারীরা নির্বিচারে ধর্ষণ করতো৷ দুর্নীতিবাজরা এক সপ্তাহে একটা দেশ খেয়ে ফেলতো৷ ডাকাতি এতো বেড়ে যেত যে মানুষ সারাক্ষণ ভয়ে তটস্থ থাকতো। এক কথায় পৃথিবীতে অরাজকতা নেমে আসতো। ঠিক এই কারণে, আমাদের পৃথিবীতে কিছু কাজ বৈধ, কিছু অবৈধ। একটা কাজ আপনি ইচ্ছে করলেই করতে পারবেন না, সামাজিক আইনে, রাষ্ট্রীয় আইনে, ধর্মীয় আইনে বাধা পড়ে যাবেন। এই আইনগুলো কেন? এই আইনগুলো লাগাম টেনে ধরার জন্য। মানুষের ভেতরে আছে লাগামহীন পশু, যার এমন সব বাসনা আছে, সেগুলোতে নৈতিকতার বেড়ি না লাগালে সমাজ, রাষ্ট্র ধ্বংস হয়ে যাবে। আর তাই, সমাজ-রাষ্ট্র-ধর্ম বেড়ি লাগায়। থিংস ওয়ার্ক জাস্ট লাইক দ্যাট! 

কিন্তু ভাবুন, আপনি আপনার অন্তরের যেকোন একটি জঘন্য বাসনার জন্য আন্দোলনে নেমে গেলেন। সেই কাজের বৈধতা চাইলেন, অধিকার চাইলেন। সাউন্ডস ইন্টেরেস্টিং, কিন্তু লজিকাল? ভেবে দেখুন মানুষ মাদকের বৈধতার জন্য, ধর্ষণের বৈধতার জন্য, চুরি-ডাকাতির বৈধতার জন্য আন্দোলন করছে, ব্যাপারটা কেমন? আপনি কী ভাবছেন আমি ধান ভানতে শিবের গীত এনেছি? ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। এইসব কথার সাথে বর্তমান LGBT ট্রেন্ডের সাদৃশ্য আছে। অলমোস্ট সব দেশেই ধর্মীয় আইন বাদ দিলাম, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় আইনেও সমকামিতা একটা বিকৃত যৌন আচরণ এবং অপরাধ। তাই, এটাকে নিজেদের অধিকার বলে আন্দোলন করা, ওপরের ঘটনাগুলোর মতই ইলজিকাল। অপরাধ তো অপরাধই। 

এখন অনেকেই বলবেন এটা তো কেউ ইচ্ছে করে করেনা। এটা ন্যাচারাল। সেটা প্রমাণ কোথায় হয়েছে? গে জিনের উপস্থিতি নিয়ে তো এখনো কেউ প্রমাণ দিতে পারেনি। এক ভদ্রলোক একটা রিসার্চ করেছিলেন, সেখানে তিনি গে জিন আছে বলে একটা আর্টিকেল লিখেছিলেন, শেষে দেখা গেছে তিনি নিজেই গে! এছাড়া অনলাইনে 'গে জিন' বলে কিছু নেই এমন ভুরি ভুরি আর্টিকেল, রিসার্চ আছে। তাই এটাকে ন্যাচারাল বা জন্মগত বলে চালিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। আর তাছাড়া LGBT আন্দোলনের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী। সমকামীদের বক্তব্য হচ্ছে 'জন্মগত' ভাবেই আমি এমন, আমাকে কেন পরিবর্তিত হতে হবে? আমি জন্মগত বৈশিষ্ট্যে থাকার অধিকার চাই। অর্থাৎ  'জন্মগত' বৈশিষ্ট্যই পরম। অন্যদিকে ট্রান্সজেন্ডার আন্দোলনকারীরা বলে 'জন্মগত' ভাবে আমি যা, আমি তাই কেন থাকবো? আমি কেন পরিবর্তিত হতে পারবোনা? আমাকে পরিবর্তিত হওয়ার অধিকার দিতে হবে। অর্থাৎ জন্মগত বৈশিষ্ট্য পরম নয়৷ এখন এইরকম পরস্পর সাংঘর্ষিক মতবাদ নিয়ে এরা যে আন্দোলন করছে, আমরা কোনপক্ষকে থাপড়াবো? 

আর জন্মগত বলার সুযোগ না পেলেই আপনি মনোবাসনার কথাটি বলবেন হয়তো। যে আমার মনে ইচ্ছে করে, এখন আমি কী করবো, মরে যাবো? আচ্ছা, কখনো কী মার্কেটে মার্কেটে ঘোরার সময় আপনার সবকিছু কিনে ফেলতে ইচ্ছে হয়না? আপনি কী পারেন কিনতে? কিংবা কিছু একটা ইচ্ছেমতো উঠিয়ে নিয়ে যেতে? কেন পারেন না? সীমাবদ্ধতা আছে, সেটা হচ্ছে টাকা এবং আইন। টাকার সীমাবদ্ধতা কিনত এলাউ করে না, আইনের সীমাবদ্ধতা ইচ্ছেমতো উঠিয়ে নিতে এলাউ করেনা, সিম্পল!  

মানসিক চাহিদাগুলোও সেইম। আপনার যা ইচ্ছে করে তাই করতে পারবেন না আপনি। শুধু ধর্ম নয়, আপনাকে বাধা দেবে সামাজিক আইন এমনকি রাষ্ট্রীয় আইনও। আর এটাই যৌক্তিক। না হলে সমাজে আস্তে আস্তে অবক্ষয় নেমে আসবে। সমকামীদের অধিকার দিলে উদ্ভব হবে শিশুকামী, পশুকামী, এরপর মাদকের লিগালাইজেশন নিয়ে কথা হবে, এভাবেই সমাজের ভাঙন নেমে আসবেই। আর সমাজ নিজের ভাঙন ঠেকাতেই আইন দিয়ে মানুষকে সীমাবদ্ধ করবে। এটাই যথাযথ। 

Post a Comment

3 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
  1. কতিপয় নাস্তিক ছাড়া আর কেউ সমকামিতাকে সাপোর্ট করে না

    ReplyDelete
  2. ভাইজান, নতুন লেখা আপ দিয়েন প্লিজ।

    ReplyDelete