নৈতিকতা সমাচার


মায়ের সাথে শারিরিক সম্পর্কের ব্যাপারটি নৈতিকভাবে ভালো না খারাপ? কিংবা আপন বোনের সাথে? এই প্রশ্নটিই হয়তো আপনাদের কাছে অবান্তর ঠেকবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, লিবারেল বিশ্ব আমাদের সামনে এই ধরণের প্রশ্ন এনে হাজির করছে। শুধু এটিই নয়, এর চেয়ে আরো জঘন্য প্রশ্ন; যেমন- পশুর সাথে শারিরিক সম্পর্ক, মৃত মানুষের সাথে শারিরিক সম্পর্ক বৈধ কী-না ইত্যাদি। গুগল করলেই এসব জঘন্য কাজ বৈধ করার আন্দোলন নিয়ে বেশকিছু নিউজ চোখে পড়বে আপনাদের। 


এখন কথা হচ্ছে, এসব আলাপ আসলো কেন? এসব আলাপ এসেছে মোরাল ফিলোসফি থেকে। স্রষ্টার অস্তিত্বসম্পন্ন বিশ্ব আর স্রষ্টার অস্তিত্ববিহীন বিশ্বে তফাৎ আছে। স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে এমন বিশ্বব্যবস্থায় deontological ethics প্রচলিত। এই শব্দটা এসেছে গ্রীক শব্দ deon থেকে, যার অর্থ duty. অর্থাৎ, মানুষ কোন কাজটা করবে, কোনো কাজ নৈতিক নাকি অনৈতিক এটা duty এর সাথে সম্পর্কিত। বুঝিয়ে বলার জন্য স্রষ্টাবিহীন বিশ্বব্যবস্থায় যাচ্ছি। 


.


স্রষ্টাবিহীন বিশ্বব্যবস্থায় স্রষ্টা কতৃক প্রদত্ত কোনো বিধানের বালাই নেই। সেখানে বিধান বানাবে মানুষ নিজে। কিন্তু মানুষ তো একমত হতে পারে না, নানাজন নানা মত। তাহলে নৈতিকতার স্ট্যান্ডার্ড কী হবে? একেক দার্শনিক একেক কথা বলে গিয়েছেন। শেষমেশ লিবারেল দর্শনের বিখ্যাত দুই মানুষ জেরেমি বেন্থামের Utilitarianism আর জন স্টুয়ার্ট মিলের harm principle মিলে নাস্তিকদের নৈতিকতার একটা ভিত্তি দাঁড়ালো যার নাম Consequential ethics. ভয় পাওয়ার কিছু নেই, বুঝিয়ে বলছি। 


এটার মানে হলো, কোনো কাজ নৈতিক নাকি অনৈতিক, এটা নির্ধারণ হবে তার ফলাফলের ওপর। বেন্থাম বলেন, কাজটা নৈতিক হবে যদি কাজটা করার কারণে অধিক মানুষের সুখ নিশ্চিত হয়। মিল সেখানে আরেকটা পয়েন্ট এড করেন, সেটা হলো- কাজটা নৈতিক হবে, যদি কাজটা অন্যের ক্ষতি না করে। এই দুইয়ে মিলে consequential ethics. 


.


এবার আসেন, প্রথমদিকের প্রশ্নগুলোয় ফিরে যাই। মায়ের সাথে যৌন সম্পর্ক করা কি বৈধ? Consequential ethics কী বলে? যদি দুজনেরই consent থাকে, কারো ক্ষতি না হয়, তবে এই কাজটার কারণে যেহেতু মানুষের সুখ নিশ্চিত হচ্ছে, তাহলে কাজটা এই এথিক্সে বৈধ। লিবারেলদের মধ্যে অনেকেই ইনসেস্টকে বৈধ বলে স্বীকার করেন। কেউ কেউ অবশ্য রিবাটল দেয়ার চেষ্টা করেন এই বলে যে, পরিবারের সদস্যদের সাথে যৌনসম্পর্ক করলে বিকলাঙ্গ সন্তান জন্ম হবে, জেনেটিক হার্ম। খুব ভালো, যদি প্রোটেকশন ব্যবহার করে? যদি বাবা-ছেলে কিংবা ভাই-ভাই শারিরিক সম্পর্ক করে? তবে তো তা বৈধ হতে সমস্যা নেই, তাইনা? 


একই যুক্তিতে পশুকাম এবং মৃত মানুষের সাথে শারিরিক সম্পর্কও বৈধ হয়ে যায়। কারণ, এতে কারো ক্ষতি হচ্ছে না, সুখ নিশ্চিত হচ্ছে। অনেকেই বলতে পারে এদের তো কনসেন্ট দেয়ার ক্ষমতা নেই, তাই বৈধ না। সেক্ষেত্রে তো সেক্স টয়, সেক্স ডলের সাথেও যৌন সঙ্গম অবৈধ হওয়ার কথা, তাই নয় কি? যদি সেগুলো বৈধ হয়, তবে পশুকাম, মৃতের সাথে শারিরিক সম্পর্ক, এগুলো কেন বৈধ নয়? ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে, নৈতিকতার এই স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখার জন্য অনেক লিবারেলই অজাচার, শিশুকাম, পশুকাম, মৃতের সাথে শারিরিক সম্পর্ক এসবকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেয়। 


.


আপনি যদি স্বাভাবিক মানুষ হয়ে থাকেন, তবে ইতোমধ্যেই আপনার গা গুলাতে শুরু করেছে। কারণ, উপরোক্ত বিষয়গুলো জঘন্য কাজ। এগুলো একজন স্বাভাবিক, সুস্থ মানুষ ভাবতেও পারে না। যদি বলেন, কীভাবে বুঝলেন এগুলো খারাপ কাজ? বলবো এগুলো সেল্ফ এভিডেন্ট মোরাল ট্রুথ। এগুলো in built আমাদের মধ্যে আছে। এগুলো সার্বজনীন, সব সংস্কৃতিতে বিদ্যমান এবং এগুলো কাউকে শেখাতে হয় না।  


আমাদেরকে কেউ না শেখালেও আমরা বুঝি কাউকে আঘাত দেয়া খারাপ, সত্য বলা ভালো, দান করা ভালো, পরিবারের সদস্যদের সাথে শারিরিক সম্পর্ক জঘন্য কাজ। এগুলো আমাদের মধ্যে জন্মগতভাবে জন্ম নেয়া নৈতিকতা। এগুলোকেই বলা হয় deontological ethics. এই এথিক্স ফলাফলের ওপর নির্ভর করে না। এগুলো একরকম duty। ধরেন, আপনার সত্য বলার কারণে কারো যদি ক্ষতিও হয়, তারপরও সত্য বলা আপনার duty, সত্য বলা নৈতিকভাবে ভালো। 



ড্যানিয়েল হাকিকাতজু একটা উদাহরণ টেনেছিলেন। ধরেন, আপনি সুপারমার্কেট থেকে একটা মৃত মুরগী কিনলেন। কেনার পর আপনি সেটার সাথে যৌন সঙ্গম করলেন৷ তারপর সেটা রান্না করে খেয়ে ফেললেন। এটা কি নৈতিক নাকি অনৈতিক? কমনসেন্স বলে, এটা একটা জঘন্য কাজ, শুনতেই গা ঘিনঘিন করে। কিন্তু consequential ethics এর দৃষ্টিকোণ থেকে এটা বৈধ। এতে কোনো সমস্যা নেই। 


এবার Consequential ethics আর deontological ethics এর তফাৎ বোঝা গেছে না? বোঝা গেলে এটাও আপনাদের বুঝে যাওয়ার কথা যে, লিবারেল ফিলোসফি কেমন একটা সমাজব্যবস্থা, বিশ্বব্যবস্থার দিকে মানুষকে নিয়ে যেতে চায়! 



লিবারেলরা কিন্তু শুরুতেই এসব আলাপ দিয়ে শুরু করে না, তারা শুরু করে মুখরোচক আলাপ দিয়ে। যেমন, প্রকাশ্যে রাস্তায় চুমু খেলে অসুবিধা কী? দুজনের কনসেন্ট আছে, ক্ষতি হচ্ছে না কারো। বুঝলেন তো নৈতিকতার কোন ক্যাটাগরিতে পড়ছে? একই কথা খাটে হোমোসেক্সুয়ালিটি বৈধ করা নিয়ে যারা কথা বলে তাদের ক্ষেত্রেও। তাদের যুক্তি হচ্ছে, কারো ক্ষতি হচ্ছে না এবং কনসেন্ট আছে। এই আলাপ তুলে তারা ধীরে ধীরে অজাচার, পশুকাম, মৃতের সাথে শারিরিক সম্পর্ক এসবকে বৈধ করবে। 


সময় থাকতে না বুঝলে, পরে মাশুল দিতে হবে। 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.