জ্বিন নিয়ে লিখেন!!

 গতবছর মেলায় এক আপু আমার বই সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "ভাইয়া, আপনি সায়েন্সে পড়েন?" আমি বললাম, "জ্বি।" তিনি বললেন, "সায়েন্সের স্টুডেন্ট হয়েও আপনি জ্বিন বিশ্বাস করেন?" আমি তার প্রশ্নের উত্তর দেইনি। প্রশ্নটা শুনে হেসেছিলাম। 


আমার মাথার মধ্যে একটা ভাবনা খেলে যায়। আমি যেই বইটা লিখেছি, সেটি ছিলো ফ্যান্টাসি ঘরানার। এখানে


যেসব কন্টেন্ট ছিলো প্রায় প্রতিটিই ছিলো অবাস্তব এবং অলৌকিক। যেমন– সেখানে উড়তে পারে ও অদৃশ্য হতে পারে এমন মানুষ ছিলো, অ্যামিবাসদৃশ সেনাবাহিনী ছিলো, ড্রাগন ছিলো, পাখাওয়ালা জুতো ছিলো, মিথোলজির বিভিন্ন ভয়ংকর প্রাণী ছিলো। এগুলো সবই অবাস্তব এবং কাল্পনিক। তাহলে আপুটি আমাকে স্পেসিফিকলি জ্বিনদের ব্যাপারে কেন বললেন? 


এই প্রশ্নের ভেতরে লুকোনো আছে ইসলামের প্রতি একটা বিরূপ ধারণা। গ্রিক মিথোলজি থেকে আসা হেডিসের পাখাওয়ালা জুতো মাথাব্যথার কারণ হলো না তার। মাথাব্যথার কারণ হলো ইসলামের জ্বিন। ইসলামের একটা কনসেপ্ট সাহিত্যে কেন ঢুকবে? তাহলে তো সাহিত্যে আর প্রগতি থাকলো না। এমনই লুকোনো-ছুপানো বিদ্বেষ নিয়ে ঘোরে বাংলার প্রগতিবাজেরা। 


আমি দুটো বিষয় বলি। একটি হলো বিজ্ঞান পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ অনুসরণ করে। এর মানে হলো– অতিপ্রাকৃতিক কিছু আছে কী নেই, তা নিয়ে বিজ্ঞানের মাথাব্যথা নেই। অতিপ্রাকৃতের ব্যাপারে বিজ্ঞান নিরব থাকে। বিজ্ঞান প্রতিটি ঘটনার বস্তুগত ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করে। অন্যদিকে বেশিরভাগ প্রগতিশীল বিজ্ঞানবাদীরা দার্শনিক প্রকৃতিবাদের সাথে পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদকে মিলিয়ে ফেলে। দার্শনিক প্রকৃতিবাদের মূল বক্তব্য হলো অতিপ্রাকৃতিক কিছুই নেই, প্রকৃতির বাইরে কিছু নেই। বিজ্ঞান এই ধারণা লালন করে না৷ দুটো গুলিয়ে ফেলা জ্ঞানের কমতি বৈ কিছু না। 


দ্বিতীয়টি হলো– সাহিত্য সংস্কৃতির অংশ। সংস্কৃতিতে বিশ্বাস প্রতিফলিত হওয়া জরুরী। আমি যা লিখবো, তাতে আমার বিশ্বাসের ছাপ থাকবে। এটা যে জরুরী তা '২০ সালের আমি জানতো না। আজকের আমি জানি। 


এছড়া, জ্বিনের অস্তিত্ব আছে এটা আমরা বিশ্বাস করি। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, রাসূলের (সা.) হাদীসে পেয়েছি। জ্বিন রিয়েল লাইফে এক্সপেরিয়েন্স করেছে, এমন বহু মানুষ আছে। জ্বিনের উপদ্রব থেকে বাঁচার জন্য চিকিৎসাপদ্ধতিও আছে ইসলামে। জ্বিন ইসলামে সুপ্রতিষ্ঠিত একটা বিষয়। এটাকে অস্বীকার করা যাবে না। 


আর আমাদের গল্পগুলোতেও জ্বিনদের স্থান দেয়া উচিত। প্রগতিশীল বিজ্ঞানবাদীরা আমাদের ছোট্ট বাচ্চাদের মাথা খেয়ে দিবে। তারা সুস্থ বিজ্ঞানের জায়গায় বিজ্ঞানবাদের বিষ ঢোকাবে তাদের মধ্যে। তাই, আমাদের বাচ্চারা কী পড়ছে তা আমাদের খেয়াল রাখা জরুরী। যারা হরর জনরায় লেখালিখি করেন, তারা ফালতু ভুত-প্রেতের আজগুবি কনসেপ্ট ফেলে জ্বিনের গল্প তুলে আনুন। 


বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার সাথে ধর্মীয় বিশ্বাস লালন করার কোনো বিরোধ নেই৷ যারা বিরোধ দেখাতে চাইবে, এদেরকে বিজ্ঞানবাদী হিসেবে চিনে রাখবেন আর এভয়েড করবেন। সেইসাথে প্রগতিশীল বলয় যাতে সাহিত্যকে তাদের বিশ্বাস দিয়ে, তাদের হিংসা দিয়ে অবরুদ্ধ করে না ফেলতে পারে, সে ব্যাপারেও সোচ্চার হতে হবে।

Post a Comment

3 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
  1. সেটার প্রচার অলরেডি করে ফেলছে, ভ্যাম্পায়ার কন্সেপ্ট দিয়ে। গতি, শক্তি, বয়স, বয়সের জন্য মর্যাদা, কমিউনিটি সিস্টেম, আর মানুষের সমাজেই লুকিয়ে থাকা! ভবিষ্যতে বাচ্চারা যখনি জ্বিনদের বৈশিষ্ট শুনবে, বলে উঠবে এটা তো ভ্যাম্পায়ার! সত্য মিথ্যার সাথে মিশে গিয়ে ওদের সামনে মিথ হয়ে দাঁড়াবে।

    বারহাল, জ্বিনদের নিয়ে হরর গল্প না। ভালো গল্পও তো বলা উচিত। ওরা আমাদের ভাই। কাফিরদের ব্যাপারে কি বলমু, যারা মুমিন তাদের কথা বলছি

    ReplyDelete