হাজার বছর ধরে

যদি “হাজার বছর ধরে” উপন্যাসের চরিত্রদের ফেসবুক থাকত!
#রম্য
#হাজার_বছর_ধরে_ফেসবুক_ভার্শন
Written By: Asif Mahmud
মস্ত বড় অজগরের মত সড়ক এঁকেবেঁকে চলে গেছে বিস্তৃর্ণ ধানখেতের মাঝ দিয়ে। এ সড়ক টা কেন পাকা করা হচ্ছেনা তা নিয়ে বেশ কয়েকবার স্ট্যাটাস দিয়েছে মন্তু কখনো গ্রামের ফেসবুক গ্রুপে, কখনো বা "শিকদার বাড়ি" ফেসবুক গ্রুপে। মন্তুর পোস্টে জোয়ান রা সবাই লাভ রিয়েক্ট দিয়েছে, বুড়োরা লাইক দিয়ে গম্ভীর কমেন্ট করেছে। বিশেষত মকবুলের কমেন্ট দেখলে মন্তুর গা জ্বলে যায়। একে তো সে মন্তুর ফেসবুক নেম কপি করে নিজের নাম দিয়েছে। মন্তুর ফেসবুক নেম হচ্ছে "প্রিন্স মন্তু" আর এদিকে মকবুল ও নিজের ফেসবুক নাম "প্রিন্স মকবুল" দিয়েছে। "সে কোন দিক থেকে প্রিন্স?" শাপলা তুলতে গিয়ে টুনিকে বলে মন্তু। "বোঝোনা? বুড়া বয়সে ভীমরতি ধরসে তার" বলেই টুনি ফিক করে হেসে দেয়। "বুইড়ার জ্বালাতনে আমি ব্লক করে রাখসি বুইড়ারে। দিনের চব্বিশ টা ঘণ্টা সে আমারে মেসেজ দিবে। তাও কিসব ক্ষ্যাত মার্কা মেসেজ। মাইরালা গ্রুপ থেইকা কপি কইরা কবিতা পাঠায়!"
"আস্তে কও, বুইড়া যদি জানতে পারে আমগো দুইজনের আইডি ই রিপোর্ট মাইরা উড়াই দিবো। রাইতের বেলায় চ্যাটিং ও বন্ধ হয়া যাইবো"
"ইশ! এত সহজ? বুইড়ার আইডি মোলাস্টেটর বইলা মাইরালা গ্রুপে চালান কইরা দিমু। ওরাই যা বুঝার বুঝবো”
"তোমার পেটে পেটে এত শয়তানি বুদ্ধি!”
"শয়তানি আর কি। বুইড়া মইরা গেলেই বাঁচি"
মন্তু আর টুনি দুজনে পরীর দীঘির পাড়ে বসে হাসে। ওরা এখানে প্রায়ই শাপলা তুলতে আসে। দুজন দীঘির পাড়ে বসতে না বসতেই কোত্থেকে দুজন লোক ছুটে আসতে লাগল। মন্তু আর টুনি দুজনেই দৌড়ে পালিয়ে শিকদার বাড়ি চলে এল। এত রাতে তো লোকগুলোর জানার কথা নয় এখানে কেউ শাপলা তুলতে এসেছে! কিভাবে জানল ওরা? টুনির মনে প্রশ্ন জাগে। কিন্তু বেশিক্ষণ কৌতুহলী হয়ে থাকতে হয়না, মন্তুর চেহারার দিকে তাকিয়েই সে বুঝতে পারে মন্তুই কোথাও গলদ ঘটিয়েছে।
“কি করছো তুমি?”
“ফেসবুকে ছবি আপ্লোড দিসিলাম। মাথায় গামছা বাঁইধা। ক্যাপশন দিছিলাম ‘শাপলা তুলবার যাই’। তোমারে ট্যাগ ও দিয়া দিসি”
মন্তুর কথা শুনে টুনি তাড়াহুড়ো করে শাড়ির মধ্যে বেঁধে রাখা ফোনটা বের করে ট্যাগ রিমুভ করে দিল।
“পাগল হইসো মিয়া? আমার ফ্রেন্ডলিস্টে এই বাড়ির হগলে আছে। দেখলে কি হইবো বুঝতে পারো?”
টুনি মন্তুকে বিদায় দিয়ে ঘরে চলে যায়। মন্তুও ঘরে পৌঁছে আরামে লাইক কমেন্ট দেখে তার ছবিতে। গনু মোল্লা কমেন্ট করেছে, “রাত বিরাতে চুরি! নাউজুবিল্লাহ!” মন্তু রিপ্লে দিল, “আপনি এত রাতে কি করেন হুজুর?” আর এদিকে আবুল কমেন্ট করেছে, “তোমার আর কি, অবিবাহিত মাইনষের জীবনে খালি সুখ আর সুখ। আর আমি তিন তিনটা বউ পিটায়া মারার পরও চতুর্থ ঘরেও শান্তি নাই” কূটনী সালেহা আবুলের কমেন্টে রিপ্লে দিয়েছে, “হালিমার আচার আচরণ আমারো কেমন সন্দেহজন লাগে বাপু!” আবুল এংরি রিয়েক্ট দিয়ে কমেন্ট করলো, “সালেহা ভাবি, কি করছে সে আমারে কন। আইজকা পিঠের ছাল তুইলা ফালামু” সালেহা ন্যাকামি করে স্যাড রিয়েক্ট দিল। এরপর রিপ্লে করল, “পাশের বাড়ির নুরুর লগে সে কি হাসাহাসি, কি জানি বাপু! তুমি আবার মাইয়াডারে মাইরো না” আবুলের কোন রিপ্লে আসল না।
কিছুক্ষণ পর আবুলের ঘর থেকে পিটানোর আওয়ার আর হালিমার চিৎকারের আওয়াজ শোনা গেল। তারও প্রায় আধঘন্টা পর সালেহা ফেসবুকে পোস্ট দিল। তার শরীরের জখমের চিহ্ন গুলো ছবি তুলে জ্বালাময়ী পোস্ট। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই পোস্ট ভাইরাল হয়ে গেল! সেই খবর পৌঁছে গেল নারী অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। মূহুর্তের মধ্যেই শিকদার বাড়ীতে পুলিশ এসে আবুল কে ধরে নিয়ে গেল। মকবুল বুড়ো উঠানে দাঁড়িয়ে রইল। তার তিন বউ পেছনে দাঁড়িয়ে রইল।
তার প্রথম বউ আমেনা, সে খুবই নিরব ধরণের। তার ফেসবুক ওয়াল সম্পূর্ণ ফাঁকা। তার এই শান্ত স্বভাবের জন্য টুনি তার ফেসবুক আইডির নাম করে দিয়েছে “সিম্পল আমেনা” অন্যদিকে ফাতেমা মকবুলের দ্বিতীয় বউ, সে খুব বেশি কথা বলে, ঘনঘন লাইভে আসে। তার লাইভ দেখে মানুষ বিরক্ত হয় কারণ সে কথা বলার সময় মুখ দিয়ে থুথু বেরিয়ে মোবাইল স্ক্রিন ভিজিয়ে ফেলে। মকবুলের তিন বউ হওয়ার কারণে মকবুল প্রতি এক সপ্তাহ অন্তর অন্তর একেকজন বউ এর সাথে ম্যারিড লিখে স্ট্যাটাস দেয়। আর সে বিভিন্ন প্রেমের পোস্টে বউদের ট্যাগ করে। ট্যাগে অতিষ্ঠ হয়ে টুনি মকবুল কে ব্লক করে দিয়েছে। মকবুল এখন পাশের বাড়ির আম্বিয়ার প্রোফাইলে মাঝে মাঝে ঘুরে আসে। আম্বিয়া এই গ্রামের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে। তার ফেসবুক ফলোয়ার হাজারের উপর। রূপবতী এবং গুণবতী হিসেবে খুব খ্যাতি তার।
এদিকে এই সুন্দরী আম্বিয়া মাঝেমাঝেই মন্তুকে নক দেয়, খবরাখবর জিজ্ঞেস করে। আম্বিয়ার ভাইয়ের সাথে মন্তুর খুব খাতির। এই গ্রামের ফেসবুক গ্রুপের এডমিন আম্বিয়ার ভাই করিম শেখ। মন্তু সে গ্রুপে বিভিন্ন লিখালিখি করে দেখে দুজনের ভাল খাতির। মন্তুর লিখালিখি তে আম্বিয়াও মুগ্ধ। তাই সে মাঝে মাঝে মন্তুকে নক করে। আবার আম্বিয়াও ভীষণ গুনবতী, লাইভে এসে মানুষকে গান শোনায়। ঢেঁকিতে ধান ভানতে ভানতে ফেসবুক লাইভে গান করে আম্বিয়া, আর বুড়ো মকবুল লুকিয়ে লুকিয়ে সেই লাইভ দেখে আপ্লুত হয়। গণু মোল্লা অবশ্য আম্বিয়াকে বহুবার সাবধান করেছে, এ সংক্রান্ত পোস্টও দিয়েছে। কিন্তু আম্বিয়ার গায়ে লাগে না।
এদিকে শিকদার বাড়ির অন্যতম প্রতিভাবান এবং হাজার ফলোয়ারের মালিক পুঁথিপাঠক সুরত আলি। সুরত আলির পুঁথি পাঠের লাইভ পুরো গ্রামে বিখ্যাত। কখনো কখনো তার লাইভ পাঁচ হাজার ভিউ ও ছাড়িয়ে যায়। সুরত আলী সুর করে করে কমলা সুন্দরীর গল্প বলে আর মানুষ সে লাইভ দেখে আপ্লুত হয়ে যায়, শেয়ারের বন্যা বয়ে যায়। তাই বলে সুরত আলীর হেটার্স ও কম নয়। অনেকে বলে সুরত আলী অটোটিউন ব্যবহার করে, কিন্তু তাতে সুরত আলীর কিছু যায় আসেনা। সে জানে, এটাই তার আসল কণ্ঠ আর এই কণ্ঠ দিয়েই সে হাজার হাজার ফলোয়ারের মালিক হয়েছে।
এদিকে মন্তু আর টুনি রাত বিরাতে পুকুরে মাছ চুরি করতে বের হয়, মন্তু পুকুরে নামে, টুনি উপরে বসে ফেসবুকে নিউজফিড স্ক্রল করে যায়। মন্তুর ফোন টুনির কাছেই থাকে, হঠাৎ মেসেঞ্জারে টুং করে শব্দ হয়। আম্বিয়া মেসেজ দিয়েছে। দেখে টুনির পিত্তি জ্বলে যায়! এই রাক্ষসী টা কেন মেসেজ দিয়েছে! রূপের জালে মন্তুকে ফাঁসাবে ভেবেছে? আম্বিয়া লিখেছে, “কেমন আছো মন্তু মিয়া?” টুনি লিখলো, “আমি কেমন আছি তা দিয়া তোমার কি দরকার?” আম্বিয়া লিখলো, “ওমা, এ কেমন কথা! কি হইছে তোমার?” টুনি ভাবে এ কেমন স্বস্তা মেয়ে, অবহেলার স্বরে মেসেজ পেয়েও আবার মেসেজ দেয়। সে হলে মোটেও আর রিপ্লে করত না, সোজা ব্লক করে দিত। টুনি রিপ্লে দেয়, “কিছু হয়নাই। খোদা হাফেজ” আম্বিয়া উত্তরে একটা লাইক পাঠায়, আর কিছু বলে না। টুনি মনে মনে খুশি হয়, আম্বিয়ার সাথে করা এ তিনটে মেসেজ ডিলিট করে দিয়ে ফোনটা রেখে দেয় যেন কিছুই হয়নি। মন্তু মাছ নিয়ে উঠে আসে, রাতে দুজনে বাড়ি ফিরে আসে।
দিনের পর দিন কেটে যায়, আম্বিয়া আর মেসেজ দেয়না। মন্তুও জানতে পারেনা ভেতরের কাহিনী। দিনভর টুনির সাথে চ্যাটিং চলে, রাতভর ঘুরে বেড়ায় দুজন। টুনি বিভিন্ন প্রেমের স্ট্যাটাস শেয়ার দেয়, মন্তু সেগুলোর হেতু বুঝতে পারেনা। আম্বিয়া অনেক লম্বা সময় অনলাইনে থাকে, মন্তুকে মেসেজ দেয়না। মন্তুও মেসেজ দেয়না, টুনির সাথে ভালই সময় কাটে তার।
এর মধ্যেই গ্রামে কলেরা শুরু হল। দলে দলে মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হতে লাগল। যারা আক্রান্ত হয়নি তারা ফেসবুকের ফিচার ব্যাবহার করল। যেমন “Montu marked himself safe in cholera affected area” কিন্তু আম্বিয়ার ভাই করিম শেখ বাজেভাবে কলেরায় আক্রান্ত হল। ফেসবুকে তার চিকিৎসার জন্য ইভেন্ট খোলা হল। মন্তুই সব করল। বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে পোস্ট করল, আম্বিয়ার সেলেব্রেটি হওয়ার সুবাদে বেশ অনুদান ও পাওয়া গেল। কিন্তু ডাক্তার দেখানো হলে ডাক্তার ভুল করে কলেরার রোগীকে ডায়রিয়ার ওষুধ খাইয়ে দেয়ায় করিম শেখ মারা গেল। এ খবর ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেল। মন্তু আন্দোলনের ডাক দিল, গ্রামবাসী মন্তুর ডাকে সাড়া দিয়ে মিছিল সমাবেশ করে হাসপাতাল ভাঙচুর করল। এদিকে এতে করে মন্তুর জেল হয়ে গেল নাশকতার অভিযোগে। আবুল তখন সবেমাত্র জেল থেকে বেরিয়েছিল। কিন্তু মন্তুর আন্দোলনের সাথে যোগ দিতে গিয়ে তাকেও আবার জেলে যেতে হল।
এদিকে আম্বিয়ার ভাইয়ের মৃত্যুর পর আম্বিয়া একা হয়ে পড়ল। আম্বিয়ার একাকীত্বের সুযোগ নিয়ে বুড়ো মকবুল ওরফে প্রিন্স মকবুল আম্বিয়াকে মেসেঞ্জারে নিয়মিত নক দিতে লাগল। আম্বিয়া সম্মানের সহিত মকবুলের সাথে কথা বলত। অন্যদিকে টুনি মকবুল কে আম্বিয়া কে বিয়ে করার জন্য উস্কাতে লাগল। একদিকে মকবুল তার তিন স্ত্রীর কথা ভেবে এগুতে পারেনা, অন্যদিকে লুকিয়ে লুকিয়ে ফেসবুক লাইভ দেখা আম্বিয়ার লোভও ছাড়তে পারেনা। কিন্তু মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে পারছিল না।
কিছুদিনের মধ্যে আবুল আর মন্তু জেল থেকে বের হয়ে এল। বের হয়ে এসেই মন্তু ফেসবুকে ঢুকে দেখে সে বিরাট বড় সেলেব্রিটি হয়ে গেছে। ফেসবুকে তার ফলোয়ার্স সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়েছে। তার জেলমুক্তি উপলক্ষ্যে সবাই তাকে অভিনন্দন জানালো। হাজার হাজার মেসেজের ভিড়ে আম্বিয়ার মেসেজও আছে। আম্বিয়া আবেগঘন অনেকগুলো মেসেজ দিয়েছে। মন্তু সন্ধ্যায় আম্বিয়ার বাড়িই যাচ্ছিল এর মধ্যে মকবুল ওকে থামাল। বৈঠক বসল শিকদার বাড়িতে। মকবুল কাঁচুমাচু করতে লাগল। টুনি কনুই দিয়ে গুঁতো দিতেই মকবুল গলা খাঁকারি দিয়ে শুরু করল। “আমি সিদ্ধান্ত নিছি, আমি আম্বিয়ারে বিয়া করুম” সাথে সাথে সবাই সমস্বরে বিরোধিতা করল। আমেনা আর ফাতেমা যেন ঘুরেই পড়ে যাবে। মন্তু চুপ করে রইল সর্বকনিষ্ঠ হওয়ায়। আমিনা আর ফাতিমা বিলাপ জুড়ে দিল। সবাই মকবুল কে গালমন্দ করতে লাগল।
এতে মকবুলের মেজাজ চড়ে গেল। সে উঠে দাঁড়িয়ে আমিনা আর ফাতিমা কে হঠাৎ করেই তালাক দিয়ে দিল। দুজনেই মাথা ঘুরে পড়ে গেল। আবুল প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বসার পিঁড়ি টা মকবুলের দিকে ছুঁড়ে মারল। মকবুল এক হাত দিয়ে মাথা ধরল। মাথা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ল। টুনি মকবুলকে ঘরে নিয়ে গেল। ব্যান্ডেজ করে মকবুল কে ঘরেই রাখা হল। আমিনা আর ফাতিমা ঘরের শত্রু বিভীষণ বুঝতে পেরে টুনিকে শাসিয়ে গেল। বাড়ির সবাই হ্যাশট্যাগ দিয়ে স্ট্যাটাস দিল, #ঘরের_শত্রু_বিভীষণ। টুনির মোটেও গায়ে লাগত না যদি না মন্তু সেখানে লাইক দিত। আমিনা আর ফাতিমা তাদের জিনিসপত্র গুছিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেল। টুনি মকবুলের সেবা করতে লাগল, কিন্তু কোন লাভ হল না। একদিনের মাথায়ই মকবুল মারা গেল। ফেসবুকে মকবুলের আইডিতে উঠল “Remembering prince Makbul” অনেকেই মকবুল কে ট্যাগ করে ‘রেস্ট ইন পিস’ লিখে স্ট্যাটাস দিল।
এদিকে পুলিশ এসে তৃতীয়বারের মত আবুল কে নিয়ে গেল। টুনি তল্পিতল্পা গুটিয়ে নিল। মন্তুকে ডেকে বলল, “আমারে বাপের বাড়ি দিয়া আইবা?” মন্তু মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। কেমন গুমোট ভাব চারদিকে। মন্তু টুনিকে বাপের বাড়ি দিয়ে আসল। বাড়ি ফিরে ফেসবুকে নক করতে গিয়ে দেখল ব্লক করা। সালেহার ফেসবুক থেকে দেখল, টুনি স্ট্যাটাস দিয়েছে “widowed” সেই সাথে একটা সাদা কাপড়ের প্রোপিক। মন্তুর বুকটা হাহা করে উঠল। তখনি আম্বিয়ার মেসেজ পেল, আম্বিয়া ডেকেছে ওদের বাড়ি। মন্তু টুনির আইডি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল, টুনির গল্প শেষ হয়ে গেল!
কয়েক বছর কেটে গেল। আবুল এখনো জেলে। মন্তু এখন শিকদার বাড়ির ফেসবুক গ্রুপের এডমিন। গ্রুপে সব নতুন জেনারেশন, কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে সব। মন্তু আম্বিয়াকে বিয়ে করেছে, তাদের এখন বাচ্চা আছে। সুরত আলীর ছেলেটা পিতৃসম্পত্তি হিসেবে পুঁথি পাঠের প্রতিভা পেয়েছে, তার ফলোয়ার সুরত আলীর চেয়েও কয়েক গুণ বেশি। গনু মোল্লার ছেলের ইউটিউব চ্যানেল আছে। সে সেখানে ওয়াজ করে। সালেহার মেয়ে ফেসবুকে প্রেমের রেকর্ড গড়েছে, সালেহা মনে মনে ভাবে সে আজীবন করে যাওয়া কূটনামির শাস্তি পাচ্ছে হয়ত! মন্তু রাতে ঘরে আসলে আম্বিয়া পান বাড়িয়ে দেয় মন্তুর দিকে, মন্তু পান মুখে দিয়ে বাচ্চাকে কোলে নেয়। রাতে ফোন নিয়ে উঠোনে বসে। পুঁথির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, রাত গভীর হচ্ছে, আগের মতই সব! মন্তু স্ট্যাটাস দিল, “রাত বাড়ছে, হাজার বছরের পুরনো সেই রাত!”
(সমাপ্ত)

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.