No title


"তুমি একজন জাদুকর, হ্যারি!"

"আমি একজন কি?"

"জাদুকর!"
প্রোফেসর হ্যাগ্রিড নামে একজন বিশালদেহী জাদুকর যখন এসে ৯ বছর বয়সী হ্যারিকে এ কথা বলল, হ্যারি হকচকিয়ে গিয়েছিল। এবং এটাই খুব স্বাভাবিক একটি আচরণ।
সে যে একজন জাদুকর এবং তার জন্ম হয়েছে কালো জাদুকে উচ্ছেদ করতে এবং পুরো জাদুর দুনিয়া তার আগমনের কথা জানে এটা ভেবে আমরা পাঠকদের পুরো শরীরে শিহরণ জেগেছিল।
কিন্তু হ্যারির মনে হয়েছিল, না, এমনটা হতে পারেনা৷ সে তো একটা সাধারণ ছেলে। সব সাধারণ ছেলের মতই সে জীবনযাপন করে, হাসে-খেলে, খায়, ঘুমুতে যায়। তাই সে বলেছিল, "আমি হ্যারি, শুধু হ্যারি।"
কিন্তু, এটি বলে দিয়েই হ্যারি নিস্তার পায়নি। তাকে তার প্রোফেসী টেনে নিয়ে গেছে জাদুর জগতে! প্রোফেসী একটি ইংরেজি শব্দ, এর মানে হল ভবিষ্যৎবাণী। জাদুর জগতে পথ চলতে গিয়ে যেমন সে বন্ধু পেয়েছে, পেয়েছে অসংখ্য শত্রুও। সেখানে তাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে কত শত বিপদের। শেষ পর্যন্ত সে কালো জাদুকর ভোল্ডেমর্টকে পরাজিত করে কালো জাদুকে চিরতরে ধ্বংস করে দেয়। জে.কে. রাওলিংয়ের বিখ্যাত এই ফ্যান্টাসি উপন্যাস কেড়েছে শিশু পাঠকদের মন, দিয়েছে তাদের শৈশবকে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

অথচ, এই ব্যাপারগুলো যে কেবল উপন্যাসেই সম্ভব এমনটা নয়। বাস্তব জীবনে, মানব ইতিহাসেই ঘটেছে এমন রোমাঞ্চকর ঘটনা। আরবের মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ নামের এক যুবককে বুহাইরা নামক এক খ্রিষ্টান পাদ্রী বললেন,

"তুমি হলে সমগ্র মানবজাতির জন্য কল্যাণ! তুমিই হলে শেষ নবী!"

তখন সেই ছোট বালক অবাক হয়েছিল নিশ্চয়ই! হ্যারির চেয়ে কিছু বেশি ছিল তাঁর বয়স। পাদ্রী কেন এমন কথা বলেছিলেন?

কারণ, তিনি অবাক হয়ে দেখলেন, এই বালক যখন হাঁটে, তখন একখন্ড মেঘ তাঁকে ছায়া দিয়ে চলে। তিনি দেখেন, গাছগুলো তাঁকে সেজদা করে। বুহাইরা আরো দেখলেন, এই বালকের পিঠে অঙ্কিত আছে নব্যুয়তের মোহর! আর এইসবই যে শেষনবীর চিহ্ন তা তিনি জেনেছিলেন তার পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পড়ে, যেখানে বহু আগে থেকেই শেষনবীর আগমনের কথা আর তাঁর শারিরিক বিবরণ বলা আছে। অর্থাৎ প্রোফেসী!

শুধু কি এটিই, এই বালকের জন্মের আগেই এই প্রোফেসী মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। ইহুদীদের কয়েকটি পরিবার স্থায়ীভাবে মদীনায় বাস করতে শুরু করেছিল, শেষ নবীর দেখা পাওয়ার আশায়৷ আর তারা এসব জানতে পেরেছিল প্রোফেসী থেকে, যা এসেছিল তাদের ধর্মগ্রন্থ থেকে।

শুধু তাই নয়, এই নবীকে গর্ভধারণ করার জন্যও হয়েছিল প্রতিযোগিতা! কি? অবাক হলেন? বিশ্বনবীর পিতা আবদুল্লাহ যখন মা আমিনাকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন, তখন পথিমধ্যে উম্মে কিতাল নামে একজন নারী মতান্তরে এক ইহুদী গণক নারী ফাতিমা বিনতে মূর আল খাস'আমিয়া আবদুল্লাহকে তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু আবদুল্লাহ প্রত্যাখ্যান করে আমিনাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পরদিন আবার সেই মহিলার সঙ্গে দেখা হলে, আবদুল্লাহ জানতে চাইলেন সেই মহিলা আজ কেন কিছু বলছে না। মহিলা বললেন, "কাল তোমার মধ্যে যে নূর ছিল, আজ তা নেই।" এই নূর হলেন স্বয়ং রাসূল ﷺ। তাঁকে গর্ভধারণের জন্যই আবদুল্লাহকে এমন প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।

তিনিই যে শেষনবী এই বিষয়ে আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমার সঙ্গে বিয়ের কিছুদিন আগে। খাদিজার একজন দাস ছিল মাইসারাহ নামে। খাদিজা ব্যবসা করার জন্য মাইসারহকে সঙ্গে করে মক্কার সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক মুহাম্মদকে পাঠান সিরিয়ায়।

সেখানে ঘটে এক অলৌকিক ঘটনা। মাইসারাহ দেখতে পান, পুরো পথেই দুজন ফেরেশতা মুহাম্মাদকে ছায়া দিয়েছে। এক জায়গায় বিশ্রাম করতে বসলে মাইসারাহকে ডেকে একজন যাজক জিজ্ঞেস করেন, "ঐ গাছের নিচে বসা লোকটি কে?" মাইসারাহ জবাবে বলল "তিনি মক্কার কুরাইশ বংশীয় একজন লোক।" যাজক বলেন, "ঐ গাছের নিচে নবী ছাড়া কেউ বসে বিশ্রাম করে না।"

বিশ্বনবীর আগমন নিয়ে সবচেয়ে বেশি আবেগী ছিলেন খাদিজার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা বিন নওফেল। তিনি ছিলেন একজন খ্রিস্টান পন্ডিত৷ তিনি খাদিজা থেকে মাইসারাহর দেখা ঘটনাগুলো শুনে বলেন, এই মুহাম্মদই শেষ নবী, কেননা এটা শেষ নবীর জামানা, তিনি এই প্রোফেসী তার ধর্মগ্রন্থে পেয়েছিলেন।

এই ওয়ারাকা বিন নওফেল খুব দুঃখ করে বলতেন, "আমার অপেক্ষা দীর্ঘতর হচ্ছে। মুহাম্মদ অচিরেই আমাদের সরদার ও নেতা হবেন। তাঁর বিরুদ্ধাচারীদের তিনি পরাজিত করবেন। আর সমগ্র বিশ্বজগতে তিনি আলো ছড়াবেন। আহা আফসোস, যদি তখন আমি থাকতাম, তাহলে আমি অবশ্যই তাঁর দলভুক্ত হতাম!"

এরকম অসংখ্য প্রোফেসী ছিল শেষনবীর আগমন নিয়ে। এতসব প্রোফেসী থাকা সত্ত্বেও, আরবরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, মিথ্যা দাবি করেছিল তাঁর নব্যুয়ত। তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে, ধূলায় মিশে গেছে তাদের বিরুদ্ধাচরণ। টিকেছে সেই প্রোফেসীই! তিনি বিশ্বজগতের শান্তিরূপে এসেছেন। তাঁর শত্রুদের পরাজিত করেছেন। নিয়ে এসেছেন বিশ্বজগতের জন্য আলো, "আল কুর'আনুল কারীম!"

আর তাঁকে নিয়ে এতসব প্রোফেসীর মূল কোথায়? কোথা থেকে এসেছিল এইসব প্রোফেসী? সে জবাব আল্লাহ দিচ্ছেন কুর'আনে।

"যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উম্মী নবির, যার উল্লেখ তাওরাত ও ইনজিল, যা তাদের নিকট আছে তাতে লিপিবদ্ধ পায়।"

(সূরা আরাফঃ ১৫৭)

অর্থাৎ এইসব প্রোফেসীর মূল হচ্ছে আসমানী কিতাবগুলো, আর সেগুলো পাঠিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ! আর সেগুলো বাস্তবে ঘটিয়েছেন ও তিনি! সুবহান-আল্লাহ! তাই, ভবিষ্যতে যা ঘটবে বলে তিনি কুর'আনে বলেছেন, বিশেষত 'বারযাখ', 'ক্বিয়ামাহ', 'হাশর', 'মিযান', 'পুলসিরাহ', আমরা সেগুলোর প্রস্তুতি যেন গ্রহণ করি। প্রোফেসী অস্বীকার করে আমরা যেন, সেসব আরবের মত না হয়ে যাই, যারা সত্য দেখতে পেয়েও অস্বীকার করার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে।

ওয়ামা তওফীকে ইল্লাহ বিল্লাহ...

#সিরাহ_সিরিজ

তথ্যসূত্রঃ
১. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া।
২. সীরাত ইবনে হিশাম।
৩. আর রাহীকুল মাখতুম।
৪. Noble life of the Prophet.

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.