সূরা বুরুজের স্ট্রাকচার মিরাকল

 কুর'আনকে পৃথিবীর যেকোন সাহিত্যের চেয়ে উন্নত কেন বলা হয় জানেন? এর সূরাহগুলোর স্ট্রাকচারের জন্য৷ এতো সুন্দর করে সূরাগুলোর স্ট্রাকচার সাজানো, মনে হবে কেউ বুঝি অনেক সময় নিয়ে বসে বসে এগুলো সাজিয়েছে! অথচ ভেবে দেখুন, এগুলো কি এমন সাজানো অবস্থায় নাযিল হয়েছে? 


না, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে রাসূল (ﷺ) এর কাছে ওহী এসেছে। কোন মুশরিক এসে কোনো প্রশ্ন করেছে, উত্তর হিসেবে প্রিয় রাসূল (ﷺ) এর কাছে ওহী এসেছে। কখনো এই সূরার এই আয়াত, কখনো ঐ সূরার ঐ আয়াত। অর্থাৎ, কুরআন যথেষ্ট বিক্ষিপ্তভাবে নাযিল হয়েছে। এরপরও যখন কুর'আনকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হলো, দেখা গেলো এর সূরাগুলোর রয়েছে অসাধারণ সব স্ট্রাকচার। কোনোভাবেই একজন মানুষের পক্ষে এই সন্নিবেশ করা সম্ভব নয়, তাও অলিখিতভাবে শুধু মুখে মুখে! সুবহান-আল্লাহ! 

এর মধ্যে একটি খুব আলোচিত স্ট্রাকচার হচ্ছে রিং স্ট্রাকচার। রিং স্ট্রাকচার হচ্ছে এমন, ধরুণ একটি লিখায় এগারোটি লাইন আছে। ১ম লাইনের সাথে ১১তম লাইনের মিল, ২য় লাইনের সাথে ১০ম লাইনের মিল, এভাবে চলতে থাকে, আর একদম মাঝখানের লাইনটি একাকী থাকে। এই স্ট্রাকচারটিকে বলা হয় রিং স্ট্রাকচার। বেশ কিছু সূরায় এই স্ট্রাকচার আছে। আজ আমরা সূরা বুরুজ নিয়ে আলোচনা করবো। 

সূরা বুরুজে আয়াত সংখ্যা ২২। 

||১ এর সঙ্গে রিলেটেড ২১-২২ঃ

وَ السَّمَآءِ  ذَاتِ الۡبُرُوۡجِ ۙ﴿۱﴾ 

কক্ষপথ বিশিষ্ট আসমানের কসম (বুরুজঃ১) 

بَلۡ ہُوَ  قُرۡاٰنٌ  مَّجِیۡدٌ ﴿ۙ۲۱﴾  فِیۡ  لَوۡحٍ مَّحۡفُوۡظٍ ﴿٪۲۲﴾ 

বরং তা সম্মানিত কুরআন। সুরক্ষিত ফলকে (লিপিবদ্ধ)। (বুরুজঃ২১-২২) 

এখানে দেখুন বিষয়বস্তুর মিল। প্রথম আয়াতে আল্লাহ আসমানের কথা বলছেন, আর ২১-২২ এ বলছেন লাওহে মাহফুজ (সুরক্ষিত ফলক), যেটা আসমানে আছে। 

||২ ও ৩ এর সঙ্গে মিল ১৯-২০ নং আয়াতেরঃ

وَ الۡیَوۡمِ الۡمَوۡعُوۡدِ ۙ﴿۲﴾ وَ شَاہِدٍ وَّ مَشۡہُوۡدٍ ؕ﴿۳﴾ 

আর ওয়াদাকৃত দিনের কসম। আর কসম সাক্ষ্যদাতার এবং যার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়া হবে তার। (বুরুজঃ২-৩) 

بَلِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا فِیۡ تَکۡذِیۡبٍ ﴿ۙ۱۹﴾  وَّ اللّٰہُ  مِنۡ  وَّرَآئِہِمۡ  مُّحِیۡطٌ ﴿ۚ۲۰﴾ 

বরং কাফিররা মিথ্যারোপে লিপ্ত। আর আল্লাহ তাদের অলক্ষ্যে তাদের পরিবেষ্টনকারী। (বুরুজঃ১৯-২০)

এই আয়াতগুলোতে বলা হয়েছে বিচার দিবসের ব্যাপারে। কাফিরদের পরিণতির কথা বলা হয়েছে। অলক্ষ্যে পরিবেষ্টন করার অর্থ, তারা আল্লাহ থেকে পালাতে পারবে না। 

|| ৪-৭ এর সাথে ১৭ ও ১৮ নং এর মিলঃ 

قُتِلَ اَصۡحٰبُ الۡاُخۡدُوۡدِ ۙ﴿۴﴾ النَّارِ ذَاتِ الۡوَقُوۡدِ ۙ﴿۵﴾ اِذۡ ہُمۡ عَلَیۡہَا قُعُوۡدٌ ۙ﴿۶﴾ وَّ ہُمۡ عَلٰی مَا یَفۡعَلُوۡنَ بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ شُہُوۡدٌ  ؕ﴿۷﴾ 

ধ্বংস হয়েছে গর্তের অধিপতিরা। (যাতে ছিল) ইন্ধনপূর্ণ আগুন। যখন তারা তার কিনারায় উপবিষ্ট ছিল। আর তারা মুমিনদের সাথে যা করছিল তার প্রত্যক্ষদর্শী। (বুরুজঃ ৪-৭) 

ہَلۡ  اَتٰىکَ حَدِیۡثُ الۡجُنُوۡدِ ﴿ۙ۱۷﴾ فِرۡعَوۡنَ وَ ثَمُوۡدَ ﴿ؕ۱۸﴾ 

তোমার কাছে কি সৈন্যবাহিনীর খবর পৌঁছেছে?ফির‘আউন ও সামূদের। (বুরুজঃ১৭-১৮) 

এই অংশে দুটি অবাধ্য কাফির গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার কথা বলা হয়েছে যারা মুমিনদের কষ্ট দিয়েছিলো। এক ছিলো গর্ত খনন করে মুমিনদের হত্যা করা জাতি, অন্য হলো ফিরাউন ও সামূদ। 

|| ৮,৯ এর সাথে ১৩-১৬ এর মিলঃ

وَ مَا نَقَمُوۡا مِنۡہُمۡ  اِلَّاۤ  اَنۡ یُّؤۡمِنُوۡا بِاللّٰہِ الۡعَزِیۡزِ  الۡحَمِیۡدِ ۙ﴿۸﴾ الَّذِیۡ لَہٗ  مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ اللّٰہُ  عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ شَہِیۡدٌ ؕ﴿۹﴾ 

আর তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধুমাত্র এ কারণে যে, তারা মহাপরাক্রমশালী প্রশংসিত আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল। আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব যার। আর আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ের প্রত্যক্ষদর্শী। (বুরুজঃ৮-৯) 

اِنَّہٗ  ہُوَ  یُبۡدِئُ وَ یُعِیۡدُ ﴿ۚ۱۳﴾ وَ ہُوَ الۡغَفُوۡرُ الۡوَدُوۡدُ ﴿ۙ۱۴﴾ ذُو الۡعَرۡشِ الۡمَجِیۡدُ ﴿ۙ۱۵﴾ فَعَّالٌ لِّمَا یُرِیۡدُ ﴿ؕ۱۶﴾

নিশ্চয় তিনি সৃষ্টির সূচনা করেন এবং তিনিই পুনরায় সৃষ্টি করবেন। আর তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, প্রেমময়। আরশের অধিপতি, মহান। তিনি তা-ই করেন যা চান । (বুরুজঃ ১৩-১৬)

এই সেকশনের আয়াতগুলোতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার গুণ ও ক্ষমতার কথা বর্ণিত হয়েছে। 

||১০ এর সাথে ১২ এর মিলঃ 

اِنَّ  الَّذِیۡنَ فَتَنُوا الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ ثُمَّ  لَمۡ یَتُوۡبُوۡا فَلَہُمۡ عَذَابُ جَہَنَّمَ وَ لَہُمۡ عَذَابُ الۡحَرِیۡقِ ﴿ؕ۱۰﴾ 

নিশ্চয় যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে আযাব দেয়, তারপর তাওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব। আর তাদের জন্য রয়েছে আগুনে দগ্ধ হওয়ার আযাব। (বুরুজঃ১০) 

اِنَّ بَطۡشَ رَبِّکَ لَشَدِیۡدٌ ﴿ؕ۱۲﴾ 

নিশ্চয় তোমার রবের পাকড়াও বড়ই কঠিন। (বুরুজঃ১২) 

এই সেকশনে আল্লাহর অবাধ্যতার শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। 

এবং সবার মাঝের সেকশন হচ্ছে একটি সিঙ্গেল আয়াত, যেখানে ঈমানদারদের পুরষ্কার সম্পর্কে বলা হচ্ছে। 

اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَہُمۡ جَنّٰتٌ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ ۬ؕؑ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡکَبِیۡرُ ﴿ؕ۱۱﴾

নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ। এটাই বিরাট সফলতা।

(বুরুজঃ১১) 

এবং এভাবেই এই সূরাহটি একটি রিং এর স্ট্রাকচার ধারণ করে। 

প্রিয় পাঠক, ভেবে দেখুন। এই আয়াতগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছে, অর্থাৎ তিনি মুখে মুখে বলতেন। লেখার ব্যবস্থা তো করেছিলেন বহু পরে। মুখে বলতেন, তাও বিক্ষিপ্তভাবে। তাহলে সেই বিক্ষিপ্ত আয়াতগুলোকে যথাস্থানে স্থাপন করে সূরা যখন হলো, তখন এটি কি করে এমন স্ট্রাকচার লাভ করলো? শুধু একটি সূরা হলেও ভেবে নেয়া যেতো এটি কাকতালীয় ঘটনা। কিন্তু বেশ কয়েকটি সূরায়, বিশেষভাবে উল্লেখ্য সূরা আল বাকারা যেটি ২৮৬ আয়াতের সুবিশাল সূরা, সেটিতেও এই রিং স্ট্রাকচার ম্যান্টেন করা হয়েছে। সুবহান-আল্লাহ! 

এরপরও কি বলা যায় এই কুর'আন কোনো মানুষের লেখা? এরপরও কি বলা যায় এই কুর'আন আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়? 

||স্ট্রাকচার_অফ_কুরআন||

|পর্ব_১| 

লেখাঃ আসিফ মাহমুদ

Post a Comment

2 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
  1. Top 10 Most Trusted Casino Sites of 2021
    The site's features can vary widely from desktop 사다리사이트 to mobile, meaning it has a good number of 1xbet app games, and its mobile 벳 매니아 games are 포커 a lot better. There are 토토 먹튀 a

    ReplyDelete