আত্মহত্যা ও আমার ভাবনা (২)

 ১.

বলিউড স্টার সুশান্ত সিং রাজপুত আজকে নিজের ঘরে আত্মহত্যা করেছেন। আচ্ছা, তার কীসের অভাব ছিল? টাকাকড়ি, বাড়ি-গাড়ি, ফ্যান-ফলোয়ার্স, সিনেমাপাড়ায় খ্যাতি সবই তো ছিল তার। তাহলে কেন এই আত্মহত্যা? কেন এই সবকিছু ছেড়েছুড়ে দেয়া?
আরেকটি এমন ঘটনা ঘটেছিল কয়েক বছর আগে। লিংকিন পার্কের লিড ভোকালিস্ট চেস্টার আত্মহত্যা করলেন। তার ভক্তকূল ছিল সুশান্তের চেয়েও বেশি, পুরো বিশ্বব্যাপী নাম ছিল তার। তাহলে তিনি কেন আত্মহত্যা করলেন? কীসের অভাব ছিল তার?
দুজনের ক্ষেত্রেই যেটির অভাব ছিল, তা হচ্ছে 'inner peace' বা 'মনের ভেতর শান্তি'। হ্যাঁ, এটুকুই ছিল তাদের অভাব। আর এই অভাব পূরণ করতে না পেরেই আত্মহননের মত ভয়ংকর কাজ করেছেন এরা।
২.
আমাদের বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশই ডিপ্রেসড। বিশেষ করে ১৬-২৫ রেঞ্জে বয়স যাদের, তারা। কেন এরা ডিপ্রেসড? যেকোন কারণ হতে পারে, প্রেমবিচ্ছেদ, ক্যারিয়ার, পারিবারিক ঝুটঝামেলা, অভাব-অনটন ইত্যাদি! এদেরও ওপরের দুজন মানুষের মত একটা জিনিস নেই, তা হচ্ছে 'inner peace'.
এদের অধিকাংশই এই ডিপ্রেশন কাটাতে অদ্ভুত সব কাজ করে৷ কেউ কানে হেডফোন গুঁজে গান শোনে, কেউ সিগারেট-মাদকে ডোবে, কেউবা আত্মহননের সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে!
৩.
আজ পর্যন্ত কখনো এমন দেখেছেন, কোন প্র্যাক্টিসিং মুসলমান সুইসাইড করেছে? একজন ঈমাম, মুয়াজ্জিন কিংবা কোন ইসলামিক স্কলার, বা এমন কোন ব্যক্তি যে তার বাস্তবজীবনে ইসলাম প্র্যাক্টিস করছে, এমন কাউকে সুইসাইড করতে দেখেছেন কিংবা শুনেছেন কখনো?
নরমালি, এভারেজ কেসে এর উত্তর আমি জানি, "না" ই পাবো। কারণ, এটাই সত্যি। কিন্তু কীভাবে? তাঁরা কেন সুইসাইড করেন না? তাঁদের জীবনে কি অপূর্ণতা নেই, দুঃখ-কষ্ট নেই? তবে কি তাঁরা সেই কাঙ্ক্ষিত 'inner peace' পেয়ে গেছেন? পেলে কীভাবে?
৪.
ইসলাম মানে শান্তি। আপনারা অনেকেই এই কথাটি বলে থাকেন। কিন্তু কখনো আদতেই ভেবে দেখেননি, শান্তিটি ঠিক কোথায়! ইসলাম মানে শান্তি, এটি ঠিক, আর সেই শান্তিটি নিহিত আছে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের মধ্যে। আপনি যখন আপনার শরীর, মন, জীবনযাপন, সবকিছু আল্লাহকে সঁপে দেবেন সম্পূর্ণরূপে তখনই আপনি খুঁজে পাবেন সেই কাঙ্ক্ষিত 'শান্তি'।
মানসিক শান্তি কি সত্যিই আসে? এবং এর পেছনে যুক্তি কি অনেকেই ভাবতে পারেন। সেজন্য আমি কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করি।
(১) যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে এমনটা ভাবা। সবসময় আল্লাহর উপর ভরসা রাখা এবং ভালো কিছুর অপেক্ষা করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,
"হে নবী, তাদেরকে বলে দাও, যারা তোমার হাতে বন্দী হয়ে আছে যে, আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তরে কোন রকম মঙ্গলচিন্তা রয়েছে বলে জানেন, তবে তোমাদেরকে তার চেয়ে বহুগুণ বেশী দান করবেন যা তোমাদের কাছ থেকে বিনিময়ে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া তোমাদেরকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।"
(সূরা আনফালঃ ৭০)
(২) দুনিয়াকে কারাগার মনে করা। এটা মাথায় রাখা যে দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী এবং আখিরাতে অবশ্যই আমাদের জন্য উত্তম কিছু আছে ইন-শা-আল্লাহ। এতে করে দুনিয়ায় যা কিছু খারাপ হোক, তাতে এক ধরণের ড্যাম কেয়ার মানসিকতা চলে আসে।
(৩) নিজের চেয়ে নিচুতে তাকানো। যারা আপনার চেয়ে অধিক কষ্টে আছে, তাদেরকে দেখলে আপনার কষ্টটা কিছুটা লাঘব হবে৷ এ প্রসঙ্গে রবী ঠাকুরের "একদা ছিলনা জুতা চরণযুগলে" কবিতাটি উদাহরণ হতে পারে।
(৪) ধৈর্যধারণ করা। এ প্রসঙ্গে কুর'আনে বারবার এসেছে। আল্লাহ মুমিনদেরকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন। একজন প্রকৃত মুমিন কখনো অধৈর্য হয়না।
(৫) কুর'আনুল কারীম তিলাওয়াত ও আল্লাহর যিকর। কুর'আন হচ্ছে সকল ডিপ্রেশনের ওষুধ। আপনার মন খারাপ থাকলে গান না শুনে কিছুক্ষণ কুর'আন তিলাওয়াত করে দেখুন। ইন-শা-আল্লাহ মন ভাল হয়ে যাবে। আর আল্লাহর যিকর প্রসঙ্গে আল্লাহ কুর'আনে বলেছেন,
"যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।"
(সূরা রা’দ ২৮)
সাধারণত, যাঁরা মুমিন, প্র্যাক্টিসিং মুসলমান, যাঁরা আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেয়, তাঁরা কখনো ডিপ্রেসডই হওয়ার সুযোগ নেই ইন-শা-আল্লাহ, সুইসাইড তো দূরেই রইল!
এবার বুঝেছেন তো 'inner peace' কীভাবে পাওয়া যায়? তবে আর দেরি কেন? সেই পরম শান্তি অন্বেষণে লেগে পড়ুন..
~আসিফ মাহমুদ

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.