আমি দু'দিন আগে লিখেছিলাম, আমরা ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করিনা। কিন্তু, এ কারণে 'পর্দার প্রয়োজন নেই' বলা নারীবাদী স্ট্যান্ড ও মানিনা। এটা দ্বারা আমি কি বোঝাচ্ছি?
কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন বলছেন,
"হে নাবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মু’মিনা নারীদেরকে বলঃ তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবেনা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।"
(সূরা আহযাবঃ ৫৯)
এখানে আল্লাহ পর্দার দুটো হিকমাহ বর্ণনা করেছেন। পর্দার ফলস্বরূপ মু'মিনা নারীরা কি পাবে?
১. তাদেরকে চেনা সহজ হবে।
২. তাদেরকে উত্যক্ত করা হবেনা।
প্রথম পয়েন্টের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মুসলিমা নারীদের মর্যাদা নির্দেশ করা হয়েছে, তাঁদেরকে জাহিল নারীদের থেকে পৃথক করার ব্যাপারে বলা হয়েছে।
অর্থাৎ, পর্দা শুধু প্রোটেকশনই নয়, এটা একজন মুসলিমার মর্যাদা নির্দেশ করে। অথচ বোনেরা এই পয়েন্টটিকে মিসআন্ডারস্টুড করেন!
দ্বিতীয় পয়েন্টটি গুরুত্বপূর্ণ। দেখুন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের সৃষ্টিকর্তা, তিনি জানেন আমাদের জন্য কোনটি ভালো আর কোনটি মন্দ। পর্দার হিকমাহ হিসেবে তিনি বলেছেন, আর এতে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবেনা। এখন অবশ্যই এটা একটা জেনারেল রুলিং হিসেবে আল্লাহ বলেছেন, ব্যতিক্রম হবেনা এমন কোন কথা নেই। এজন্যই পর্দা করেও অনেকে হ্যারাজড হন। কিন্তু জেনারেল কেইসে পর্দা একটা শিল্ড, যেমনটা আল্লাহ বলেছেন।
একটা র্যাশনাল আর্গুমেন্টে আসি। অনেক বোনেরা বলেন, পুরুষ কেন চোখের হেফাজত করেনা, আমি পর্দা করি বা না করি। এখানে দেখার বিষয় হচ্ছে চোখের হেফাজত সবাই করবে কী-না। ধরেন একজন অমুসলিম পুরুষ অথবা এমন কেউ যার কোনো মোরাল ভ্যালুজ নাই, সে কি চোখের হেফাজত করবে? এছাড়া দেশে আইন থাকার পরেও নৈতিক স্খলনের কারণে অনেকেই তো আইন ভাঙে, তাইনা?
এইযে ধরেন ঢাকার রাস্তায় ছিনতাই হয়, এজন্য আপনি অন্ধকার রাস্তায় না হেঁটে আলোময় রাস্তা চুজ করলেন। নির্জন রাস্তায় একাকী হাঁটলেন না। এটা কি? এটা হলো সতর্কতা। কোলাহলময় রাস্তায়ও ছিনতাই হতে পারে, কিন্তু ইন জেনারেল হিসেবে ও একজন র্যাশনাল থিংকার হিসেবে আপনি ফাঁকা ও অন্ধকার রাস্তার চেয়ে কোলাহলময় ও আলোযুক্ত রাস্তা চুজ করেছেন। আপনি এখানে মোটেও বলছেন না ছিনতাইকারীর মোরাল ভ্যালুজ নাই, সে কেন ছিনতাই করে। আপনি জানেন অলরেডি এই অপরাধী শ্রেণিটা এরকমই! তাই আপনি আক্ষেপ চেপে রেখে নিজের সেইফটি নিয়েই আগে ভাবেন।
এখন আপুদের একটা প্রশ্ন করি। ধরুন, একজন রেপিস্ট অথবা ইভটিজার রাস্তায় ওঁত পেতে আছে শিকারের জন্য। তার কোনো মোরাল ভ্যালুজ নাই। বিচার ব্যবস্থা, আইনের শাসন এসবকে এই কেসে ভুলে যান। এখন একজন মুসলিমা নারী তার মাহরামের সাথে রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছে যথাযথ পর্দাসহ, সে হ্যারাজমেন্টের স্বীকার হবে, নাকি একজন পর্দাহীন নারী ছোটো পোশাকে মাহরাম ছাড়া হেঁটে যাচ্ছে সে হ্যারাজমেন্টের স্বীকার হবে?
এখন, লক্ষ্য করার বিষয়, আমি কিন্তু পর্দাহীন ঐ নারীকে ছোটো করছি না। তার হ্যারাজড হওয়া উচিত এমনও বলছি না। হতে পারে সে অন্য ধর্মালম্বী, তার পর্দার বিধান নেই। তাই তাকে হ্যারাজ বা রেইপ করার রাইট কারো নেই। আমি জাস্ট পর্দা কীভাবে শিল্ডের কাজ করে সেটা বোঝাতে চাইছি। প্লিজ টেইক নো অফেন্স।
মুসলিমা বোনেরা, ডিবেটে জড়ানোর আগে এই কথাগুলো একটুখানি চিন্তা করে নেবেন। এই আয়াতটি উপলব্ধি করার চেষ্টা করবেন। আল্লাহ আপনাদের সম্মানিত করেছেন, প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। তাই নারীবাদীদের কথায় ট্রিগার্ড হয়ে যাওয়ার আগে দ্বীন শিখুন, বিধান জানুন, র্যাশনালি থিংক করুন।
বারাকাল্লাহু ফী'কুম।