কাব্যে সীরাহ


শুনবি তোরা সেই মানবের গল্পকথা?
কোটি লোকের হৃদয়জুড়ে যে নাম গাঁথা!
এক যে ছিলো মরুর দেশ এক ছন্নছাড়া,
থাকতো কিছু কঠিন মানুষ বাঁধনহারা,
হানাহানি, লুটপাট আর যৌনাচারে,
ভাঙতে বসে সমাজখানা পাপের ভারে!
তাওহীদেরই বাণী ভুলে অমানিশা,
লাত-উযযার মূর্তি পূজোয় হারায় দিশা,
রবের ঘরে সাজিয়ে রাখা থরে থরে,
কতোশতো মূর্তি বাণিজ্যেরই তরে!
কন্যা ঘরে জন্ম নিলে ব্যস্ত হয়ে,
জীবন্ত প্রাণ কবর দিতো পালার ভয়ে!
এই আঁধারের নাম তো জানিস, জাহিলিয়্যা,
কে জ্বালালো সেই সমাজে জ্ঞানের দিয়া!
শুনবি তোরা কে এলো ফের মশাল হাতে?
মা আমিনার ঘর রাঙালো আঁধার রাতে!
বলেন মাতা, আমার ভেতর কোন সে আলো?
সিরিয়ার ঐ প্রাসাদখানায় রঙ জ্বালালো?
দুনিয়াতে আসার আগেই বাবার বিদায়,
কয়েক বছর পার হতে মা, কী অসহায়!
এরপরে তো দাদাই ছিলেন মাথার ওপর,
বছরখানেক যেতেই তাঁরও বিদায় প্রহর!
এতিম ছেলে, চাচার ঘরে উঠলো বেড়ে,
পড়ালেখা হয়নি শেখা, ব্যবসা ছেড়ে।
বিশ্বস্ত বলেই লোকে ডাকতো তাঁকে,
এটা ওটা আমানতের ভার সে রাখে।
ঝগড়াঝাঁটি বাঁধলে লোকে খুঁজতো তাঁকে,
আল-আমিন যা বলবে, তাতে ভরসা রাখে,
কাবার পাথর বসানো নিয়ে যুদ্ধ বাঁধে,
তাঁর সমাধায় তৃপ্ত হয়ে মিললো কাঁধে!
শুনবি তোরা কোন সে মানব, এমন গুণী!
মন ভরেনা, যতই তাহার গল্প শুনি!
অন্ধকারের সমাজখানা তাহার মনে,
অশান্তি আর ব্যকুলতার জালটি বুনে,
জীবনখানা কীভাবে-ক্যান, প্রশ্ন নিয়ে,
হেরাগুহায় ধ্যানমগ্ন হতেন গিয়ে!
তিনটি বছর কাটলো ধ্যানে গুহার দ্বারে,
আল্লাহ এবার পাঠিয়ে দিলেন ফেরেশতারে।
'পড়ো তোমার প্রভুর নামে' কণ্ঠ শুনে,
ঘাবড়ে গেলেন, কে এসেছে সঙ্গোপনে!
জীব্রিল বলে পড়ো, তিনি 'না' করে যান,
পড়তে জানি নাকো আমি, বেরোয় যে প্রাণ,
গুহা থেকে ঘরে ফিরে থরোথরো
কাঁপুনিতে, স্ত্রীকে বলেন চাদর ধরো!
ভীত হয়ে প্রাণ হারানোর শঙ্কা করেন,
স্ত্রী খাদিজা সান্ত্বনা দেন, 'ধৈর্য ধরেন!'
আপনি তো সেই ব্যক্তি যিনি দয়া দেখান,
প্রিয়ভাষী, আত্মীয়তার কদর শেখান।
বিবির স্নেহে শান্ত হলেন সদ্য নবী,
বুঝতে পেলেন ঐশী বাণীর কোন সে দাবী,
হাজার মানুষ মাঝে তিনি অনন্য কেউ,
শুষ্ক মরুভূমির মাঝে সিন্ধুর ঢেউ।
এরপর বহু দিন কেটে যায় রাত্রি আসে,
ওহীর দেখা পান না নবী, কাঁপেন ত্রাসে,
আল্লাহ তবে গেছেন ছেড়ে, নাকি রেগে?
সময়গুলো কাটে নবীর দুঃখ-বেগে।
ছ'মাস পরে জীব্রিল ফের দিলেন দেখা,
প্রিয় নবীর মুখে ফোটে হাসির রেখা,
আল্লাহ বলেন, তোমায় আমি আগলেছি খুব,
এবার রবের দাওয়াহর কাজে দাওনা হে ডুব!
মহামানব ওহীর দাওয়াহ দেন গোপনে,
আত্মীয়জন, কাছের মানুষ আর আপনে,
মূর্তিপূজক কাফের যারা সজাগ ভীষণ,
জানতে পেলো মোহাম্মদের গোপন মিশন!
এরই মাঝে আল্লাহ বলেন, লুকিয়ে নয়,
দ্বীনের দাওয়াহ প্রকাশ্যে দাও, দিনের আলোয়,
এবার সকল কাফের পূজক ক্ষেপলো বলে,
কিছু লোকে ভীড়ছে মোহাম্মদের দলে।
কতোশতো যুক্তি আঁটে, চালায় জুলুম,
রুখতে পারে নাকো নবীর দাওয়ায় উলুম।
ইয়াসার আর সুমাইয়াকে হত্যা করে,
বিলাল বুকে পাথর চেঁপেও স্লোগান ধরে!
কীসের নেশায় মরছে এরা, সইছে জখম!
মোহাম্মদের দ্বীনের মাঝে কেমন অহম!
কাফিররা সব হয়রান হয়, সভায় বসে,
ভাবে সবাই প্রলুব্ধতায় গলবে তো সে?
আবু তালিবের ঘরে সবাই একে একে,
মহানবীর দরবারে সব আর্জি রাখে,
ধনদৌলত, ক্ষমতা না লাগবে নারী?
তুমি যদি বলো সবই দিতে পারি!
শুনেই নবী বলেন হেসে, কী যায় তাতে,
চাঁদ ও সুরুজ এনেও যদি দাও গো হাতে,
আমার রবের বাণী আমি বলেই যাবো,
আমার পুরষ্কার তো রবের কাছেই পাবো।
ব্যর্থ হয়ে বুদ্ধি আঁটে, আটকাতে চাও?
পাগল, কবি, গণক বলে গুজব ছড়াও৷
নবীর আছে ঐশী বাণী, পরশপাথর,
যেই না শোনে, রবের প্রেমে হয় সে কাতর!
বাড়লো গতি, ইসলামেরই বিজয় রথের,
নির্যাতন আর অত্যাচারের কঠিন পথের,
কেউবা সয়ে চুপি চুপি, কেউ ছাড়ে দেশ,
দাঁতে দাঁত চেপে ভাবে, এই বুঝি শেষ!
কাফিরগণের কূটবুদ্ধির নতুন চালে,
গোত্রসমেত নবী পড়েন কঠিন জালে,
বয়কটেরই নামে তাদের ছুঁড়ে ফেলে,
ক্ষুৎপিপাসায় তিনটি বছর মরুর ঢালে।
বিলাল বলেন, গাছের পাতা, চামড়া-বাকল,
এসব খেয়েই কাটতো জীবন, বন্দি-শেকল!
এতোখানি কষ্ট মাঝেও দ্বীনের বাণী,
ছাড়েননি তো দয়ার নবী, চোখের মণি।
শুনবি আরো সেই মানবের গল্পকথা?
কেন তিনি কোটি লোকের হৃদয়ে গাঁথা?
(সংক্ষেপিত)
[কাব্যে সীরাহ আমার ভবিষ্যৎ একটি পরিকল্পনা। সেটার একটা ট্রায়াল এই কবিতা। ]

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.