ইসলামে দাসপ্রথা নিয়ে যারা কথা বলেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, যুদ্ধবন্দীদের সাথে কিরূপ আচরণ অধিক যুক্তিযুক্ত এবং মানবিক?
তাদেরকে বর্বর উপায়ে হত্যা করা নাকি দাস-দাসী হিসেবে গ্রহণ করা?
যুদ্ধবন্দী নারীদের গণধর্ষণ করে হত্যা করা অধিক মানবিক, নাকি সে একজন পুরুষের মালিকানাধীন থাকবে, তার থেকে সন্তান গ্রহণ করবে, স্ত্রীর কাছাকাছি অধিকার পাবে, এটা মানবিক?
এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাসদের কেমন অধিকার দিয়েছেন, সে ব্যাপারে তো সবার জানা আছে। তিনি তাদেরকে খাবারে, পোশাকে সমান অধিকার দিতে বলেছেন। তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে বলেছেন।
শুরুর দিকে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তাঁদের মর্যাদা অনন্য! আর সেই অনন্য মর্যাদাধারীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ক্রীতদাস-ক্রীতদাসী। যায়েদ বিন হারিছা (রা) প্রথম জীবনে ছিলেন রাসূল (সা) এর দাস। পরে তিনি তাঁর সন্তানের মর্যাদা লাভ করেন। বহু যুদ্ধে তিনি সেনাপতি হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন, একাধিকবার যুদ্ধে যাওয়ার সময় রাসূল (সা) তাঁর হাতে মদীনার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। বিলাল(রা) এর ইতিহাস তো কাউকেই বিশেষভাবে বলার প্রয়োজন নেই আশা করি।
ইসলাম দাস-দাসীদের মানুষের মর্যাদা দিয়েছে, নেতা হওয়ার মর্যাদা দিয়েছে, তাদের অধিকার নিশ্চিত করেছে।
এখন বলবেন, কিন্তু তাও তো তারা দাস। আরেকজনের সম্পত্তি, অধীন। ওকে ফাইন!
এখন কি দাসপ্রথা নেই? পুঁজিবাদী সমাজে শ্রমবিক্রির যেই প্রক্রিয়া, সেটি কি পরোক্ষ দাসপ্রথা নয়? এখনো কর্মচারীরা তাদের মালিকের অধীন। শিল্প বিপ্লবের ঘটনা তো বেশ দূরের নয়, তাও সেটা পুরনো কথা বলে নাহয় বাদ দিলাম। এখনকার সময়ে তাকান। এখনো তো কর্মচারীদেরকে ১০-১২ ঘণ্টা করে খাটানো হয় নামমাত্র মূল্যে। বসের পায়ের তলায় পড়ে থাকতে হয়। কতো গার্মেন্ট শ্রমিকরা আত্মহত্যা করে। কেউ সাহস পায়না দেখে চুপচাপ দাসত্ব করে। দাসপ্রথা কি আসলেই নেই?
এছাড়া সামাজিক শ্রেণির কথা টানলে তো শেষই হবেনা। সব সমাজেই শ্রেণিবিভাগ আছে। উঁচু স্তরের মানুষ-নিচু স্তরের মানুষ, বড়লোক-গরীব, উঁচু বংশ-নিচু বংশ ইত্যাদি! ইসলাম সেই শ্রেণিবিভাগ মিটিয়েছে। সমাজতান্ত্রিকদের মতো ফাঁকা বুলি ঝাড়েনি, ইউটোপিয়ায় বসবাস করায় নি, প্রকৃতপক্ষেই করে দেখিয়েছে।
আমার কথা বিশ্বাস করতে হবেনা, নিজেই ঘেঁটে দেখুন। ইসলাম শ্রেণি বৈষম্য বিলুপ্ত করতে কতখানি করেছে আর অন্যান্য মতাদর্শ কতোখানি। এরপর ইসলামকে ক্রিটিসাইজ করবেন নাহয়!
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।